দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি কুতুবদিয়ার লবণ চাষীরা

দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি কুতুবদিয়ার লবণ চাষীরা 1ইফতেখার শাহজীদ রোকন : দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক লবনচাষিরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রম করে মাঠে লবন উৎপাদন করেও মূল্যায়িত হচ্ছেনা তাদের শ্রম। ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় ১৭৮৮ হেক্টর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়। দ্বীপের অন্তত ১৫ হাজার লোকজন এ শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ মে: টন। যার উল্লেখযোগ্য অংশ সরবরাহ করা হয় এ এলাকা থেকে। এর পরও মধ্যস্বত্তভোগীদের দাপটে দ্বীপের এ শিল্প অবমূল্যায়িত হয়ে আসায় এতে জড়িত হাজারো লোকজন চরম ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ।

বাংলা বছরের অগ্রহায়ণ মাস হতে লবণের মৌসুম শুরু হয়। শৈত্য প্রবাহের কারনে কিছুদিন উৎপাদন প্রক্রিয়া বিঘিœত হয়। এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে লেমশীখালীর প্রান্তিক লবণচাষী আজিজ মিয়া জানান। তবে দালাল-ফঁড়িয়াদের কারনে লবণের ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা প্রান্তিক চাষীরা।

উপজেলার আলী আকবর ডেইল, বড়ঘোপ, কৈয়ারবিল, লেমশীখালী, দক্ষিন ধুরুং ও উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের অনেক জায়গায় দালালদের কারনে প্রকৃত দাম না পাওয়ায় এসব এলাকার চাষীরা তাদের উৎপাদিত লবণ বিক্রি না করে জমা করে রেখে দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট লোকজন জানান।

গত বছর লবণের দাম তুলনামুলকভাবে সন্তোষজনক থাকায় এবছর অনেকটা আগেভাগে মাঠের কাজে নেমে পড়েছিলেন প্রান্তিক চাষীরা। কিন্তু চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম চড়া থাকলেও বর্তমানে তা নিম্নমুখী। বর্তমানে লবণের এ বাজারদর উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম বলে জানান সংশ্লিষ্টজনেরা। এ জন্য দালাল-ফঁড়িয়াদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন এ শিল্পে জড়িত লোকজন।

দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি কুতুবদিয়ার লবণ চাষীরা 2
লেমশীখালীর লবণচাষী ফরিদ আলম জানান, দালাল-ফঁড়িয়ারা সিন্ডিকেট করে জমি মালিকদের কাছে কমদামে আগাম বর্গা নিয়ে নেয় এবং মৌসুমজুড়ে লবণ সংগ্রহের চুক্তিতে চড়াদামে প্রান্তিক চাষীদের মাঝে জমি, পলিথিন ও পানি বরাদ্দের জন্য দাদন (আগাম টাকা) দেয়। ফলে পরিমাপের সময় ওজনে কারচুপিসহ জিম্মি করে রাখে চাষীদের। ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশায় চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের জন্য আগেভাগে মাঠে কোমর বেঁেধ নেমে পড়েছিল চাষীরা। কিন্তু দালাল সিন্ডিকেটের কারনে লবনের দাম না পাওয়ায় চরম হতাশ তারা। এরকম অবস্থা অব্যাহত থাকলে লবণশিল্প ধ্বংসের আশঙ্কা করেছেন ভুক্তভোগি লবণ চাষীরা।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে লবণের ঘাটতি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি বছর এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এ শিল্পে জড়িত লোকজন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ শিল্প বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!