চকরিয়া-পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, সেতু-কালভার্ট ও বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে বেড়িবাঁধসহ ব্রিজ-কালভার্ট। মাতামুহুরী নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে বেতুয়া বাজার ব্রিজের এপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গিয়েছে। এর কারণে ব্রিজটি হুমকির মুখে পড়েছে।

এছাড়া দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ফলে চকরিয়া-পেকুয়ার উপকুলীয় ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ৩ লক্ষাধিক বানবাসী মানুষ।

ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদী বেয়ে পার্বত্য এলাকা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বেতুয়া বাজারের পূর্ব পাশে ব্রিজের নিচে এপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গেছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে ওই ব্রিজটি। এছাড়া বিএমচরের কুইরল্যারকুমের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে। অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও সদর ইউনিয়নের মেহেরনামার এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ইউএনও মাহাবুবউল করিম স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বেড়িবাঁধটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন।

চকরিয়ার পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়ার সাতটির মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। একটি পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে শতাধিক গ্রাম পানির নিচে এখনো তলিয়ে রয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢলের পানিতে জিম্মি হয়ে পড়েছে বানবাসী মানুষ।

বানবাসী এসব পরিবারের লোকজন বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যার পানি কমেনি। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যা ত্রাণ দিচ্ছেন তা পর্যাপ্ত নয়। আরো ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে চকরিয়া-পেকুয়া, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও আলীকদমে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এই বৃষ্টির পানি রাতের দিকে মাতামুহুরী নদী দিয়ে নেমে আসে ভাটির দিকে। এ সময় নদীর দুই কূল উপচে লামা-আলীকদম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, সাহারবিল, চিরিংগা, কৈয়ারবিল, কোণাখালী, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, ফাঁসিয়াখালী ও পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা এবং পেকুয়া সদর, উজানটিয়া, মগনামা, বারবাকিয়া, শিলখালীসহ বেশ কটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়।

কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান ও সুরাজপুর-মানিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যার পানি কমেনি। শত শত পরিবারে রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মাঝে খিচুড়ি রান্না করে ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। সকালে বেতুয়া বাজার ব্রিজ ও কুইরল্যারকুমের বেড়িবাঁধ সরজমিনে দেখে এসেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, বন্যার পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত দুর্গতদের শুকনো খাবারের পাশাপাশি চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হবে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে করণীয় ঠিক করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব-উল করিম বলেন, বৃষ্টি না কমায় বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানি আরো বাড়বে। মেহেরনামার ঢলের পানিতে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধটি সংস্কার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব জিনিসপত্র বন্যাকবলিতদের বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, অতিবর্ষণের ফলে বন্যার পানি নামতে পারেনি। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যার্তদের বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ ৪০ মেট্রিক টন চাল ও দুই হাজার পেকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও আরো বলেন, কোণাখালীর কুইরল্যারকুম ভেঙ্গে যাওয়ায় উপকুলীয় এলাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!