কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) অভিযানে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ধকোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ফুলবাড়ি এন্ড ইভেন্টস, শাহী বিরিয়ানি হাউজ ও মাবুদ সুজ।
প্রসংগত, কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘী, গোলদিঘী ও বাজারঘাটা (নাপিতাপুকুর) দীঘিগুলোকে পর্যটনবান্ধব করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে আশপাশের স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হচ্ছে। তার ধারাবাহিক অংশ হিসেবে রোববার (১২ মে) সকাল দশটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর রাশেদ এর নেতৃত্বে অভিযানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় র্যা ব, পুলিশ, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
রোববার (১২ মে) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন ফুলবাড়ি এন্ড ইভেন্ট এর পরিচালক জাকেরুল হক রুবেল। এ সময় অন্য ক্ষতিগ্রস্তরাও উপস্থিত ছিলেন।
রুবেল বলেন, কোন ধরনে নোটিশ না দিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গত শুক্রবার ১০মে উচ্ছেদ অভিযানে যায়। সেদিন কউক চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বললে তিনি পনেরদিন সময় দেন। কউক চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মতে একটি লিখিত আবেদনও জমা দিই। এরমধ্যেই আমরা দোকানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু কউকের বেধে দেয়া সময়ের একদিন না গড়াতেই রোবার (১২ মে) সকালে অতর্কিতভাবে উচ্ছেদ অভিযানে চালানো হয়। দোকানভর্তি মালামাল সরানোর কোন ধরনের সুযোগ দেয়া হয়নি।
রুবেল আরো বলেন, ‘আমরা বিয়ে ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের ডেকোরেশন ও ভিডিওসহ নানা কাজ করতাম। দোকানে আমাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিছুই বের করতে পারিনি। চারটি ভিডিও ক্যামেরা, দুইটি ডিএসএলআর ক্যামেরা, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরা ও ডেক্সটপসহ অন্তত পঁয়ত্রিশ লাখ টাকার মালামালের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। জীবনের শেষ সম্বল দিয়ে আমি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলাম। আজ আমাকে পথে বসিয়ে দিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।’
ফুলবাড়ি এন্ড ইভেন্টস এর মালিক পক্ষের জাকেরুল হক রুবেল বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ১২ লাখ টাকা সেলামী দিয়ে দোকান ভাড়া নিই। দোকানের অনেক সাজসজ্জা ও উন্নয়ন করেছি। প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েও লোকসানের মধ্যে কোন রকম এগিয়ে নিচ্ছিলাম প্রতিষ্ঠানটি। অল্প সময়ে সব চুরমার করে দেয়া হয়েছে। আমাদের কি দোষ ছিল? দুয়েকটি দিন সময় হাতে পেলে হয়তো আমরা মালামাল সরাতে পারতাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত শাহী বিরিয়ানির মালিক মো. সবুজ। তিনি বলেন, ‘মাত্র মাস তিনেক আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছি। দোকানে দশ লাখ টাকার ডেকোরেশনও করেছি। মাত্র গুছিয়ে উঠছিলাম। কিন্তু বিনা নোটিশে আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলো কউক। এতে আমার অন্তত পনের লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চোখের সামনে আমার প্রতিষ্ঠান তছনছ করার দৃশ্য এখনো বিঁধছে। – এসব কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল(অব.) ফোরকান আহমদের যোগাযোগ করতে চাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এসএস