অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিকসেই মৃত্যু হল পর্যটক তরুণী তানিয়ার

কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজার সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে মুর্মূষ অবস্থায় উদ্ধার করা তরুণী তানিয়া আকতার মুনের (২২) মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

index

 

তার বাড়ি ঢাকার ১১৭ নারিন্দায়। এই ঘটনায় দু’হোটল কর্মচারী আটক রয়েছে। মুনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কক্সবাজারে এসেছেন তার বাবা। কক্সবাজার সদর মডেল থানার অপারেশন অফিসার আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তানিয়া আকতার মুনের ডায়বেটিকস একদম নিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল। তাই তার শারীরিক অবস্থা একদম ভেঙে পড়ে। যা চিকিৎসা দিয়ে আর ফিরিয়ে আনা যায়নি। শেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মুনের বাবা সুলতান আহমদের বরাত দিয়ে আবদুর রহিম জানান, মুন একজন ডায়বেটিকস রোগী এবং মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি বিবাহিত ছিলেন। ভালোবেসে এক ছেলেকে বিয়ে করে বনিবনা না হওয়ায় তাকে ডিভোর্স দেন মুন। এরপর আবার বিয়ে ঠিক করেন পরিবার। কিন্তু এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় সে এক সপ্তাহ আগে কক্সবাজারে পালিয়ে আসেন। কক্সবাজারে এসে কয়েকটি হোটেল বদলের পর সর্বশেষ স্বপ্নবিলাস হলিডে সুইটস’এ উঠেন।
স্বপ্নবিলাস হলিডে সুইটস কর্তৃপক্ষ জানান, ১৪ অক্টোবর রাত ৮টায় স্বপ্নবিলাস হলিডে সুইটস উঠেন তানিয়া আকতার মুন। কিন্তু একা হওয়ায় তাকে হোটেল কর্তৃপক্ষ রুম দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে অনেক অনুরোধ ও মা নামে একজনকে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দিয়ে হোটেলে রুম পান। এরপর তিনদিন সেখানে অবস্থান করেন। এসময়ে তিনি খুব একটা বাইরে বের হননি। গত ১৫ অক্টোবর সকাল থেকে জ্বরসহ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে ওষুধ কিনেও খাওয়ানো হয়েছে তাকে। শেষে ১৬ অক্টোবর জ্বর একটু কমলে সকালে বাড়ি ফিরতে আগ্রহী হয়। শরীর দূর্বল হওয়ায় হোটেল ম্যানেজার ও একজন বয় মিলে তাকে চট্টগ্রামের গাড়িতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করে।
স্বপ্নবিলাস হলিডে সুইটস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান জানান, চট্টগ্রামের গাড়িতে তুলে দিতে যাওয়ার পথে সিএনজি অটোরিক্সায় জ্ঞান হারায় মুন। এতে সন্দেহ করে তাদের ধাওয়া করে লোকজন। ধাওয়া খেয়ে তারা সমুদ্র সৈকতের ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা পয়েন্টে অবস্থান করে। এর মধ্যে সকালে ব্যায়াম করতে বের হওয়া কয়েকজন লোকও সন্দেহ করে টুরিষ্ট পুলিশকে খবর দেয়।
ট্যুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসেন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী জানান, লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে দু’জন যুবকসহ অচেতন মুনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করে তাকে তাৎক্ষণিক কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে ওই দু’যুবককে আটক দেখিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়।
জানা গেছে, মেয়ের মৃত্যু খবর পেয়ে সোমবার বিকাল ৪টায় বিমান যোগে কক্সবাজার পৌঁছেন মুনের বাবা ব্যবসায়ী সুলতান আহমদ। পৌঁছে তিনি কক্সবাজার সদর থানায় যান। সেখানে মেয়ে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তিনি। তার দেয়া ভাষ্য মতে, তার মেয়ে খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বখে যায়। পরে এক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। পরে বনিবনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে ডির্ভোস হয়। এর মধ্যে ডায়বেটিক রোগে আক্রান্ত হয় মুন। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে ডায়বেটিকসও প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই কারণে তাকে ইনসুলিন নিতে হতো। চিকিৎসার জন্য তাকে থাইল্যান্ড পর্যন্ত নেয়া হয়েছিল। এই সংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি সাথে নিয়ে এসেছেন।

 

এদিকে কিছু দিন আগে তার আবার বিয়ে ঠিক করে পরিবার। দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি না হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে সে কক্সবাজার চলে আসে। এখানে এসে ক্ষোভের বশে সে নিজের শরীরের প্রতি ব্যপক অবহেলা করে। এতে ডায়বেটিকস একেবারে নিন্মপর্যায়ে চলে যায়। এ কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, ‘মুনের মৃতদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

 

রিপোর্ট : আরিফুর রহমান, কক্সবাজার

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!