হাজার মাসের সেরা শবে কদরের রাত আজ

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে আজ শনিবার (১ জুন) দিবাগত রাতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও পালিত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এ উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ইসলামী ফাউন্ডেশনের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদসমূহে শেষ হবে খতমে তারাবিহ। মসজিদসমূহে সাধারণ মুসল্লিরা সারারাত ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন।

শবে কদর মুসলিম জাতির কাছে এমন মহিমান্বিত ও বরকতময় হওয়ার কারণ হলো সুরা আল কদর। সুরা আল কদরে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন- “নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই রাতে প্রত্যেক ফেরেস্তার তাদের মালিকের সব ধরনের আদেশ নিয়ে যমিনে অবতরণ করেন। শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।

সুরা দুখানের প্রথম চার আয়াতে আল্লাহ তা’লা বলেন, হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।
বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে, মহানবী সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তার পূর্বেকৃত সব গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।’

মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয় শবে কদরের রাতে। কোন কোন আলেমের ব্যাখ্যায় এসেছে তাঁর নিকট প্রথম সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। আবার কারো ব্যাখ্যায় এ রাতে ফেরেশতা জিবরাইলের কাছে সম্পূর্ণ কোরআন অবতীর্ণ হয় যা পরবর্তিতে ২৩ বছর ধরে নবী মুহাম্মদের নিকট তার বিভিন্ন প্রয়োজন এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়।

এই রাত এমন বরকতময় হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোমিনুল হক বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাঃ-এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ অনেক বছর বেঁচে থাকতেন। ফলে তারা দীর্ঘ সময় আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু নবী মুহাম্মদ সাঃ ও তাঁর উম্মতগণের আয়ু অনেক কম হওয় তাদের পক্ষে ইবাদাত বন্দেগী করে পূর্ববর্তীগণের সমকক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তা’লা উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশেষ রজনীতে ইবাদাত করে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন।

২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাতে কদর হতে পারে। তবে অধিকাংশ আলেম, ফকিহগণের গবেষণায় উঠে এসেছে ২৬ রমজান দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে।

হযরত মুহাম্মদ সা. রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, রাসূল সা. বলেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবে কদর সন্ধান করো। (বুখারি ও মুসলিম)

আরেকটি হাদিসে আছে রাসূল সা. বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবে কদর সন্ধান করো। (সহীহ বুখারী)

হযরত আয়েশা (রা.) মুহাম্মদকে (সা.) শবে কদর সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন, হে রাসুলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তখন নবী সা. বলেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিযি)

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!