অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি উৎপাদন, বনফুলকে চার লাখ টাকা জরিমানা

জনসাধারণকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ ও অস্বাস্থ্যকর-নোংরা পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করেই চলেছে মিষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বনফুল। বেকারি পণ্য তৈরিতে বিভিন্ন অনিয়মের অপরাধে ২০১৬ সালে বিরাট অংকের জরিমানা গুণলেও নিজেদেরকে সংশোধন করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় আবারো খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে অনিয়মের অপরাধে শাস্তির মুখে পড়লো বনফুল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নোংরা পরিবেশে তৈরি ও মেয়াদোত্তীর্ণ মিষ্টি খাওয়ার পরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। এতে জীবন বিপন্ন হতে পারে।’
ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনকারীদের দাবি- এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হোক।

শনিবার (১১ মে) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজিদ থানা এলাকায় বনফুলের মিষ্টি তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় র‌্যাব-৭। এ সময় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রয় করার অপরাধে বনফুল অ্যান্ড কোম্পানিকে চার লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আখতারুজ্জামান।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার মাশকুর রহমান বলেন, জনসাধারণকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ ও অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে উৎপাদন করে বিক্রয় করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার (১১ মে) দুপুরে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন হামজারবাগ এলাকায় বনফুলের কারখানায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে বনফুলের কারখানায় দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই; মিষ্টি রাখার টবে মরা মাছি পড়ে আছে। এছাড়াও দই তৈরির কম্বল অত্যন্ত নোংরা, ফিনিশিং পণ্য ফ্লোরে প্যাকিং করা হচ্ছে, স্টোরেজ ফ্লোর স্যাঁতস্যাঁতে; কর্মরত শ্রমিকরা কোনো ধরনের গ্লাভ্স ব্যবহার না করেই কাজ করছে। এ সব অপরাধে নিরাপদ খাদ্য আইনে বনফুল অ্যান্ড কোম্পানিকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

মাশকুর রহমান আরও জানান, অভিযানে বনফুলের কারখানা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নোংরা খাদ্যদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ কেজি নোংরা মিষ্টি, ২১ কেজি দই, ৫২ কেজি ময়দা এবং ৮০ পিস নোংরা কম্বল রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাশকুর রহমান বলেন, ২০১৬ সালেও খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে অনিয়মের অপরাধে বনফুলকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এবার বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা দিয়েছে; তাদের কারখানায় যে সব দোষ-ত্রুটি রয়েছে, তা আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সংশোধন করবে। অন্যথায় র‌্যাব-৭ আবারো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এদিকে, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করার ফলে মানুষের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এ ধরনের খাদ্য খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেট ফাঁপা, বমি, পাতলা পায়খানা, ক্ষুধামন্দা, আলসার, কিডনি ফেইলরসহ নানান রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। আর এসব রোগে আক্রান্ত হলে সময় মতো হাসপাতালে না নিলে জীবনশঙ্কা হতে পারে।’
প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ করেননি বনফুল গ্রæপের চেয়ারম্যান এমএ মোতালেব।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৪ জুন দুপুরে খাদ্যদ্রব্যে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া ব্যবহার করায় র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম বনফুলকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ১৭ আগস্ট মাত্র ২১ লাখ টাকার পুঁজি এবং ২০ জন কর্মচারী নিয়ে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডে ছোট্ট পরিসরে গড়ে উঠে বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি। যাত্রার ২৯ বছরের মধ্যে সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ২০০টি শোরুম রয়েছে এ কোম্পানির। মিষ্টি ব্যবসা থেকে শুরু ১২ বছর পর ২০০১ সালে ড্রাই ফুড উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করে কোম্পানিটি। ২০০৩ সালে যোগ হয় বনফুল গ্রুপ কিষোয়ান স্ন্যাকস লিমিটেড।

এসআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!