‘ফইর হবিরর ছেমাই’

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ইফতার

অঞ্চলভেদে এক এলাকায় এক এক খাবার বিখ্যাত। চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের তেলিপট্টি রোডে বিশেষ একধরনের সেমাই তৈরি হয় যার সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে সারা চট্টগ্রামে।

প্রমিত বাংলায় এটিকে ‘দেশি সেমাই’ বলে পরিচিত হলেও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এটি ‘ফইর হবিরর ছেমাই’(ফকির কবিরের সেমাই) বলেই একনামে পরিচিত। যুগের পরিবর্তনে এই সেমাইয়ের দোকান কিছুটা আধুনিকতার এসে এর নাম হয়েছে মেসার্স ফকির কবির। বেকারি পণ্য তৈরি করলেও সেমাইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ সুনাম রয়েছে।স্বাদে ও গুণে তারা এখনো পর্যন্ত সেই সুনাম বজায় রেখেছেন।
প্রতিবছর শবে বরাতের পর রমজানের শুরুতে এই সেমাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। ইফতারির আইটেমে চট্টগ্রামের প্রায় পরিবারগুলোতে এই সেমাই বেশ জনপ্রিয় ছিল।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অনেকটা ঘানিভাঙা মেশিনের মতো দেখতে একটি মেশিনে আড়াআড়ি ভাবে বাঁধা লম্বা একটা কাঠ বা বাঁশ ধরে দুইজন লোক গোলাকার হয়ে হেঁটে ঘোরাতে থাকলে এটির বিশেষ একটি ডাইস থেকে ময়দার খামি চিকন সুতার আকৃতির সেমাই হয়ে মেশিন থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর আর এই সেমাইকে তখনই গোলাকৃতির পৃথক পৃথক ডালায় নেয় অন্য কারিগরেরা। পরে সেমাইসহ এই ডালাগুলো রোদে শুকিয়ে তন্দুরিতে দিয়ে লালচে রং হয়ে এলে এগুলোকে বিক্রির জন্য টুকরিতে নিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়।
‘ফইর হবিরর ছেমাই’ 1

দোকানে সেমাই কিনতে আসা বাকলিয়া ডি সি রোড এলাকার আবদুস সালামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিবছর রোজা ও ঈদে অতিথিদের অপ্যায়নে জন্য এই সেমাই ১-২ কেজি কিনি। এটার সাথে বাজারের অন্য সেমাইয়ের তুলনা হয় না।

নগরীর অভিজাত পরিবার এবং প্রবীণদের কাছে ফকির কবিরের এই সেমাই খুবই জনপ্রিয়। নগরীর উত্তর কাট্টলী থেকে আসা ক্রেতা শুকুর আহমদ জানালেন, গতবছর একজনের মাধ্যমে কিনে নিয়েছিলাম এই সেমাই। খেয়ে ভালো লাগাতে অবার কিনতে আসলাম।’

জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ এই সেমাই নিয়ে দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী আবু অহম্মেদ বলেন,বাবা প্রয়াত কবির আহম্মেদ ১৯৩৬ সালে ভাড়া দোকানে প্রথম এই ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের দোকানের জায়গাটি ক্রয় করি।আমরা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ময়দাকে ভালো ভাবে চালনি দিয়ে পরিস্কার করে ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে খামি করে এই সেমাই তৈরি করি। এই সেমাইতে কোন ধরনের ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। সুনামের কারণে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, সৌদি আরবসহ মালয়েশিয়াতেও অনেকে এই সেমাই কিনে নিয়ে যান। চট্টগ্রামের মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী নোয়াপাড়া অঞ্চলে আমাদের এই সেমাইয়ের বিশেষ কদর ও চাহিদা রয়েছে।

আবু আহম্মেদ জানান, পাইকারিভাবে তারা এই সেমাই বিক্রি করেন না। বেকারিপণ্য ছাড়া শুধুমাত্র প্রতি কেজি ১৯০ টাকা করে দৈনিক ৫০/৬০ কেজি সেমাই তাদের বিক্রি হয় বলে তিনি দাবি করেন। এটি বিশ রমজানের পর থেকে আরো বেড়ে যায়।চাঁদ রাতের কয়েকদিন আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা এই সেমাই কিনেন।

কবির আহম্মেদ সুফী-দরবেশ টাইপের মানুষ ছিলেন বলেও জানালেন তার সন্তান আবু আহম্মেদ। তার বাবার হাতেই এই ব্যবসার প্রসার ও সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

কেডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!