৪৭ হাজার গ্রাহক জিম্মি/ পতেঙ্গা-ইপিজেড-হালিশহরে পিডিবির ট্রান্সফরমার বাণিজ্য

মাসে আদায় করা হচ্ছে লাখ টাকার চাঁদা

বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোড নিতে না পেরে ঘন ঘন নষ্ট হচ্ছে ট্রান্সফরমার। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে পতেঙ্গা-ইপিজেড-হালিশহরের গ্রাহকরা। নষ্ট হওয়া ট্রান্সফরমার নতুন করে প্রতিস্থাপন করতে সময় লাগে ২-৪দিন। তবে টাকা দিলে সহসা মেলে নতুন ট্রান্সফরমার। আবার অনেক সময় খুলে নেওয়া ট্রান্সফরমার মেরামত করে পরবর্তীতে বসানো হচ্ছে সেই পুরনো ট্রান্সফরমার। মাস শেষে গুণতে হচ্ছে লাখ টাকা। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

স্থানীয় গ্রাহকরা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানায়, প্রতিদিন ৩-৪ বার লোডশেডিং হয়। প্রায় অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাপ থাকায় সারাদিন লো ভোল্টেজ থাকে। মাসে ১-২ বার ট্রান্সফরমার বিকল হয়। একবার নষ্ট হলে এটি নতুন করে বসাতে সময় লাগে ২ থেকে ৪ দিন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা উঠিয়ে দিলে নতুন ট্রান্সফরমার পাওয়া যায়। নয়তো খবর দেওয়ার পরও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এ নিয়ে গড়িমসির আশ্রয় নেয়, কালক্ষেপণ করে অহেতুক।

জানা যায়, আকমল আলী বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ছয়টি ট্রান্সফরমার মধ্যে চারটি নতুন ট্রান্সফরমার স্থানীয় এলাকাবাসীর টাকায় কেনা। গত এক বছরে ছয়টির মধ্যে চারটি নষ্ট প্রচার করে খুলে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নতুন ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করা হয়। ওই এলাকায় ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে ইপিজেড থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিমের ‘সিলেক্ট’ করা শুক্কুর ও মহসীন হুজুরের মাধ্যমে এলাকার লোকজন থেকে টাকা উঠিয়ে ট্রান্সফরমার সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়।

জানতে চাইলে আকমল আলী বেড়িবাঁধ এলাকার ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মানুষের অতিরিক্ত চাপ ও ঘনবসতির কারণে এই এলাকায় ক্ষণে ক্ষণে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ে। একবার বিকল হলে স্থানীয়দের কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা বিদ্যুতের লোকজন হাতে দিলে তবেই মেলে নতুন ট্রান্সফরমার। অন্যথায় নষ্ট ট্রান্সফরমারের কারণে পুরো এলাকা ৩-৪দিন বিদ্যুতহীন থাকে। স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে সবার কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের হাতে দেয়। এছাড়া খুলে নেওয়া ট্রান্সফরমার আবার মেরামত করে ‘নতুন’ হিসেবে প্রচার করে পরবর্তীতে সেই পুরনো ট্রান্সফরমার বসিয়ে দেয় তারা-এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

উত্তর পতেঙ্গা কাটগড় মুসলিবাদ এলাকার একই অবস্থা। এখানে নষ্ট হওয়া ট্রান্সফরমার মেলে এলাকাবাসীর টাকায়। অন্যাথায় ৩-৪দিনেও কোনো কাজ হয় না। বিদ্যুৎ বিভাগের এটা এক ধরনের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এমনকি বিদ্যুতের বিচ্ছিন্ন সংযোগ ঠিক করতে আসলে চা খরচ-যাতায়াত হিসেবে স্থানীয়দের গুণতে হয় আরও হাজারখানেক টাকা।

কাটগড় মুসলিমাবাদ এলাকার যুবলীগ নেতা মো. জামাল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাই কী বলবো, একদিকে গরম, অন্যদিকে রমজান। ইফতার ও সেহেরির সময় চলে যায় বিদ্যুৎ। তীব্র গরমে একমুহূর্তও বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। একবার সংযোগ চলে গেলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় বিদ্যুতের জন্য। বিদ্যুতের লাইন ঠিক করতে আসলে আবার তাদের খুশি করতে হয়। না দিলে পরেরবার বললে গড়িমসি করে। এছাড়া রয়েছে ট্রান্সফরমার বাণিজ্যে। একবার ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে এটি মেরামতের জন্য স্থানীয়দের গুণতে হচ্ছে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা। না দিলে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকে না এলাকায়। বাধ্য হয়ে প্রতি ঘর থেকে টাকা উঠিয়ে দিতে হয়।’

পিডিবি বিক্রয় ও বিতরণ হালিশহর বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হালিশহর ডিভিশনটি তিনটি প্রশাসনিক ওয়ার্ডের সমন্বয় হলেও এখানে গ্রাহক সংখ্যা ৪৭ হাজার। এর অধীনে ট্রান্সফরমারের সংখ্যা ১৬০টি। ছয়টি গাড়ির মধ্যে সচল মাত্র দুটি। মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪২ জন। আনঅফিসিয়াল মিটার রিডার আছে ১০জন। এ ছাড়া মাসিক নিয়োগে ‘পিসরেট’ আছে ২৩ জন।

হালিশহর পিডিবির কর্মকর্তারা বলেন, এই ধরনের ট্রান্সফরমার নিয়ে কোন বাণিজ্য হচ্ছে না। লাইনম্যানরা টাকা নিলে সেটা তাদের সমস্যা। কেউ তো এ ধরনের অভিযোগ জানায়নি। যদি টাকা নেয় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। গ্রাহকের সেবা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা লোকবল কম, লজিস্টিক সাপোর্ট কম এবং ম্যানেজমেন্টের কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করলেন।

ট্রান্সফরমার বাণিজ্যে বিষয়ে বিক্রয় ও বিতরণ হালিশহর বিভাগের ইনচার্জ গিয়াস উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ধরনের কাজে যারাই জড়িত আমাদেরকে জানান। নষ্ট ট্রান্সফরমার ঠিক করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। গ্রাহকরা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে মহানগরের মনসুরাবাদ এলাকায় থেকে আসতে যেটুকু সময় লাগে, এই সময়ের মধ্যে পুনরায় ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করা হয়’।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!