বোর্ড সদস্যদের তোপের মুখে ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহ

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ১০ বছরে এই প্রথম

বোর্ড সদস্যরা জানতে চান, বোর্ডের নির্দেশনা ছাড়া কেন ‘ওয়াসা নাইট’র আয়োজন করা হয়েছে? এর জবাবে ওয়াসার এমডি ফজলুুল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু ঠিকাদারদের টাকায় ওয়াসা নাইট করা হয়েছে, সেহেতু এতে বোর্ডের অনুমোদন লাগবে না।’ বোর্ড সদস্যরা বলেন, ‘নীতিমালা অনুুযায়ী ওয়াসার নাম ব্যবহার করা হলে বোর্ডের অনুুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূূলক।’

অনিয়ম ও ব্যর্থতার দায়ে বোর্ড সদস্যদের তোপের মুখে পড়লেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার প্রায় ১০ বছর পর এই প্রথম বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশেষ বোর্ড সভায় তিনি সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। সদস্য প্রফেসর ড. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বোর্ড সভায় ১৩ সদস্যের মধ্যে ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত বোর্ড সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বোর্ডের নির্দেশনা ছাড়া কেন ‘ওয়াসা নাইট’র আয়োজন করা হয়েছে তা সভায় ওয়াসার এমডি ফজলুুল্লাহর কাছে জানতে জানতে চান বোর্ড সদস্যরা। এর জবাবে ফজলুুল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু ঠিকাদারদের টাকায় ওয়াসা নাইট করা হয়েছে, সেহেতু এতে বোর্ডের অনুমোদন লাগবে না।’ এর জবাবে বোর্ড সদস্যরা বলেন, ‘নীতিমালা অনুুযায়ী ওয়াসার নাম ব্যবহার করা হলে বোর্ডের অনুুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূূলক।’

নিজের আত্মীয়স্বজন নিয়ে রেডিসন ব্লুতে গ্রাহক সমাবেশের নামে তামাশার আয়োজন কেন করেছেন এবং এতে কেন ক্যাব প্রতিনিধি রাখা হয়নি তা এমডি ফজলুল্লাহর কাছে জানতে চান সদস্যরা। এর জবাবে ফজলুল্লাহ বলেন, ‘ভবিষ্যতে ক্যাব প্রতিনিধি রাখা হবে।’

সভায় সারা শহরে বিভিন্ন রাস্তা একাধিকবার খোঁড়াখুঁড়ি করার কারণে আট জন সদস্য খুবই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সদস্যরা চলমান পাইপলাইন স্থাপন কাজে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। ওয়াসার চলমান ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন কাজে অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার প্রস্তাব করেন ওই আট সদস্য।

সভায় বোর্ড সদস্যরা ওয়াসা যে প্রতিদিন ৩৫-৪০ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের কথা বলে আসছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয় মর্মে বিভিন্ন মহল থেকে যে অভিযোগ করা হয়, সে জন্য পানি শোধনাগার ও পাম্প হাউজগুলোতে ডিজিটাল মিটার স্থাপনের প্রস্তাব করেন।

ওয়াসার ভুয়া ও ভুতুড়ে বিলে গ্রাহক হয়রানি বন্ধের কথা উল্লেখ করে সদস্যরা বলেন, ‘পানি লাইন নেই কিংবা পানি পাওয়া যায় না- এমন সংযোগে লাখ লাখ টাকার বিল দিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ ধরনের গ্রাহক হয়রানি বন্ধ করার জন্য ওয়াসার রাজস্ব বিভাগকে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

উন্নয়ন কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বোর্ড সদস্যদের সম্পৃক্ত করার দাবি জানান উপস্থিত সদস্যরা।

সভায় সদস্যরা এমডি ফজলুল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন। কিন্তু এর সুুফল নগরবাসী পাচ্ছে না। উল্টো দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

আগামী রমজানের আগে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তাগাদা দেন সদস্যরা। এছাড়া শিগগিরই নতুন ডিএমডি (ইঞ্জিনিয়ার) পদ পূরণের তাগাদা দেন সদস্যরা।

সভায় ওয়াসার এমডির কোন অনিয়মের দায় বোর্ড সদস্যরা নেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়।

বোর্ড সদস্যদের উপস্থিত ছিলেন ড. নজরুল ইসলাম, ডা. শেখ শফিউল আজম, জাফর আহমদ সাদেক, মহসীন কাজী, অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী একেএম ফজল্লাহ, সোলায়মান আলম শেঠ, এফ কবির আহমদ মানিক, আবিদা আজাদ, রুখসানা কাদের, শওকত হোসেন।

জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত বোর্ড সদস্য ডা. শেখ শফিউল আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওয়াসা নাইট করা হয়েছে, বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া। গ্রাহক সমাবেশে বোর্ড সদস্যদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। একটি সেবা প্রতিষ্ঠানে এমন কেন করবে? সব পেশার লোক নিয়ে বোর্ড গঠিত। জনদুর্ভোগ যাতে না হয়; সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বলেছি সভায়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!