‘ভেজাল’ পণ্য এবার পেল ‘ভেজালমুক্ত’ সনদ! কিন্তু বাজারে থাকা সেসব ভেজাল পণ্যের কী হবে—সেটা এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেল। চট্টগ্রামজুড়ে গত কয়েক দিনের আলোচিত বিষয় হল নিম্নমানের প্রমাণিত হওয়া ওয়েল ফুড ও মধুবনের পণ্য কিভাবে হঠাৎ ‘বিশুদ্ধ’ হয়ে গেল? একইসঙ্গে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিএসটিআইয়ের অনিয়মেরই বহিপ্রকাশ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই একই প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের পণ্যকে ‘ভালো’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে বিএসটিআই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে বিএসটিআইয়ের ওপর মানুষের আস্থা হুমকির মধ্যে পড়েছে। ভোক্তারা বলছেন, ‘কোটি টাকার লেনদেনে মুক্তির সনদ। কিন্তু মানুষ এখন আর সহজে ভেজালকে গ্রহণ করবে না।’
গত ১২ মে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় নিম্নমানের বলে প্রমাণিত হওয়ায় ওয়েল ফুড, মিঠাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাইসহ ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এরপর ১৫ মে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সেই ৫২টি পণ্য তিন দিনের মধ্যে এবং ১৬ মে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দুই দিনের মধ্যে বাজার হতে প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশ দিয়েছিল।
গত ২৯ মে বিএসটিআই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওয়েল ফুড ও মধুবনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে।
এতে প্রশ্ন উঠেছে, পণ্যগুলো আগেও তো বিএসটিআই সার্টিফাইড ছিল। কিন্তু বাজারে ছাড়া পণ্যের মান ঠিক রাখতে পারেনি ওয়েল ফুড ও মধুবন। এখন মানোত্তীর্ণ সার্টিফিকেট নিয়ে পুনরায় বাজারে নিম্নমানের পণ্য ছাড়বে না—এই নিশ্চয়তা কী?
জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ভোক্তা বলেন, ‘বিএসটিআই দুর্নীতিগ্রস্থ। তারা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ দেখে। ভোক্তাদের স্বার্থ দেখে না। এভাবে ভোক্তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। ওয়েল ফুড ও মধুবনের যেসব সেমাই বাজারে আছে, সেগুলোর কী হবে?’
কিভাবে পণ্যগুলো ‘ভালো’ হয়ে গেল—এমন প্রশ্নে বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে পণ্যসমূহ মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই তাদের ওপর আরোপিত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এতে বিএসটিআইয়ের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ বা ভোক্তাদের মধ্যে সংকটের সৃষ্টি হবে না বলে মনে করেন সেলিম রেজা। তিনি বলেন, ‘আদালত তো বলেছিলেনই—এসব পণ্যের মান বাড়াতে হবে। এছাড়া পরীক্ষায় একবার অকৃতকার্য হলে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার নিয়ম তো আছেই।’
এদিকে নতুন করে নমুনা পরীক্ষায় ওয়েল ফুডের পণ্য উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা আসলেও মধুবনের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো পত্র জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামে আসেনি। এ ব্যাপারে আপনাদের কিছু করার আছে কিনা জানতে চাইলে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএসটিআই বলেছিল অনুত্তীর্ণ। এখন বলছে ঠিক আছে। এতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কিছু করার নেই। এটা উনাদের বিষয়।’
বিএসটিআইয়ের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিম্নমানের প্রমাণিত হওয়ায় এ পণ্যগুলো বাজার থেকে তুলে নিতে বলেছিল আদালত। আদালত কিন্তু পুনঃপরীক্ষা করতে বলেনি। এখন পুনঃপরীক্ষা করে সনদ দেওয়া আদালতের রায়ের পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি। বিএসটিআইয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে অনিয়ম চলে আসছে—এটা তারই বহিঃপ্রকাশ।’
সিপি