জালিয়াতি/ বন্দরের ‘অ্যাম্বুলেন্স’ বিআরটিএতে এসে ‘মাইক্রোবাস!’

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয় অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে। বিআরটিএতে এসে সেটি হয়ে যায় মাইক্রোবাস। অ্যাম্বুলেন্স আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হার ৩২ শতাংশ, অন্যদিকে মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে সেটি ১৩০-১৫৪ ভাগ। অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি করে মাইক্রোবাস হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করলে একটি গাড়িতে অন্তত ১০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া যায়। বহুদিন ধরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে রূপ পাল্টানোর এই জালিয়াতি চলছে চট্টগ্রাম বিআরটিএর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে।

আমদানিকারক আর বিআরটিএর কর্মকর্তাদের যোগসাজসে চলা এই জালিয়াতির সত্যতা পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। এ প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে খালাসকৃত ৩০টি অ্যাম্বুলেন্সের লাইসেন্সের তথ্য খতিয়ে দেখতে বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের (ইঞ্জি.) কাছে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। সোমবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম এই চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ছাড় করা গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে বলা হয়। চিঠিতে আমদানিকৃত ৩০ অ্যাম্বুলেন্সের যাবতীয় তথ্য সংযুক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হার প্রায় ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে আমদানিকৃত মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে শুল্কহার ১৩০-১৫৪ ভাগ। অ্যাম্বুলেন্স সেবা খাতে ব্যবহৃত হয় বলেই সরকার এই খাতে কম শুল্ক আরোপ করে। মানবিক এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চক্রটি অ্যাম্বুলেন্স আমদানি করে পরবর্তীতে সেগুলোকে মাইক্রোবাস হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়।

একটি সূত্র জানায়, অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি করে মাইক্রোবাস হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করলে একটি গাড়িতে অন্তত ১০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া যায়। এর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকচক্র রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের পক্ষ থেকে ৩০টি অ্যাম্বুলেন্সের লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া ছাড়াও বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবরে আরো একটি চিঠি দেওয়া হয়। ১১ জুলাই পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের মাধ্যমে ছাড়কৃত পাঁচটি যান অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে নিবন্ধিত না হয়ে মাইক্রোবাস হিসেবে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। এসব বিষয়ে ইতোপূর্বেও বিআরটিএকে অবহিত করা হয়েছে। ওই ৫টি অ্যাম্বুলেন্সের রেজিস্ট্রেশনের তথ্য পাঠানোর জন্য বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানির পর আমদানিকারকরা রেজিস্ট্রেশনের তথ্য প্রদানের বিষয়ে আন্ডারটেইকেন দিয়ে যায়। পরবর্তীতে অনেকেই সময়মতো রেজিস্ট্রেশনের তথ্য প্রদান করে না। আবার অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে লাইসেন্সের দেওয়া তথ্য সঠিক কিনা সেটিও যাচাইয়ের প্রয়োজন। মূলত এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিআরটিএর চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ পরিচালকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে।’

বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ইঞ্জি.) শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘আমদানিকৃত অ্যাম্বুলেন্সের রেজিস্ট্রেশনের তথ্য যাচাইয়ের জন্য যদি আমার কাছে তথ্য চাওয়া হয় তাহলে সেটি ভুল। এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারবে চট্টগ্রাম কার্যালয়। এ সংক্রান্ত কোন চিঠি দেওয়া হলে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

আমদানিকৃত অ্যাম্বুলেন্স মাইক্রোবাস হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘অন্য কোথাও এই ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে চট্টগ্রামে এই ধরনের ঘটনা নেই বলে দাবি করেন তিনি।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!