নিলাম গুদাম নিয়ে বন্দর-কাস্টমস দ্বৈরথ

নতুন অকশন শেড বুঝে না পেলে কেন পুরোনোটি ছাড়ব? বললেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যদিকে বন্দরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা প্রশ্ন রাখলেন, নতুন অকশন শেড বুঝিয়ে না দেওয়া হলে গত তিন বছর ধরে তারা সেটি ব্যবহার করছে কিভাবে?

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে অকশন শেড (নিলাম গুদাম) নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে। বন্দর অভ্যন্তরের অকশন শেডটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বন্দরের বাইরে নতুন করে শেড নির্মাণ করে দিলেও নানা অজুহাতে পুরোনোটি ছাড়তে চাইছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে একের পর এক চিঠি চালাচালি চলছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন অকশড শেড বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বললেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে নতুন শেড তারা এখনো বুঝে পায়নি। যদিও নতুন অকশন শেডটিতে প্রশাসনিক কাজ শুরু করেছে কাস্টমস।

বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের অভ্যন্তরে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে পুরোনো শেডটি। সেটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীত দিকে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করে দেওয়া হয় নতুন শেড (নিলাম গুদাম)। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের পর সেটি বুঝে নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরনো গুদামটি ছেড়ে দেয়নি তারা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কাস্টমসকে নতুন এই শেডটি করে দেওয়ার পেছনে একটি উদ্দেশ্য ছিল। পুরেনোটি ছেড়ে দিলে ওই পাঁচ একর জায়গা খালি হয়ে গেলে সেখানে বছরে অন্তত এক লাখ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য হ্যান্ডলিং করার সুযোগ ছিলো।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, নতুন অকশন শেড বুঝে না পেলে কেন পুরোনোটি ছাড়ব? নতুন যে শেড করে দেওয়া হয়েছে সেখানে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। আনসারদের থাকার আলাদা জায়গা নেই। এছাড়া বন্দরের অভ্যন্তরে পুরোনো অকশন শেডে কিছু কার গাড়ি রয়েছে যেগুলো নিয়ে মামলা চলমান আছে। সেখান থেকে স্থানান্তর করলে মামলার আলামত নষ্ট হতে পারে। সেজন্য বন্দরের অভ্যন্তরের অকশন শেডটি আমরা আপাতত ছাড়তে পারছি না।

কাস্টমস কমিশনারের এমন দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বন্দরের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন অকশন শেড বুঝিয়ে না দেওয়া হলে গত তিন বছর ধরে তারা সেটি ব্যবহার করছে কিভাবে? তাছাড়া মামলার আলামত হিসেবে পুরোনো শেডে যে গাড়ি থাকার কথা তিনি বলছেন এটি কোন যৌক্তিক ব্যাখা হতে পারে না। বন্দরের ওই কর্মকর্তা একটি উদাহরণ টেনে বলেন, কোন ব্যক্তিকে খুন করার পর তার ব্যবহৃত অস্ত্রটি যদি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় উদ্ধারের পর সেটি নিশ্চয়ই পুলিশের হেফাজতে থাকবে, পুকুরে নয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, কাস্টমসের অকশন শাখার দায়িত্বে যারা থাকেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা অন্য শাখা থেকে শাস্তিমূলকভাবে বদলি হয়ে আসে। সেজন্য কাস্টমসের অকশন শাখার কর্মকর্তারা অকশন শেডে গাড়ির সংখ্যা নির্ণয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে অমনোযোগী থাকে। সম্প্রতি কাস্টমসের নতুন অকশন শেডের অভ্যন্তরে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে। তারা কেউই নতুন ও পুরাতন অকশন শেডে গাড়ির সংখ্যা কতো বলতে পারেনি।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরোনো অকশন শেড থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে। এসব বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ১৫ মার্চ বন্দরের বোর্ড রুমে দুই পক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি সভা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। সেই সভায় এক মাসের মধ্যে পুরোনো শেড থেকে মালামাল স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু দখল না ছাড়ার পক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছে কাস্টমস।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, নতুন অকশন শেডটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্দরের চেয়ারম্যান মহোদয়ও আন্তরিকভাবে চাচ্ছেন যাতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অকশন শেডটি ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারা নানা অজুহাতে সেটি ছাড়ছে না।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!