চট্টগ্রাম রেলে কালোবাজারি/ কৃষক লীগ সভাপতির দিকে তেড়ে গেলেন স্টেশন ম্যানেজার

টিকিট নিয়ে বিতণ্ডার জের ধরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নিজ দপ্তরের সামনে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ তেড়ে গেলেন চট্টগ্রাম মহানগর কৃষক লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনের দিকে। এ সময় অভিযোগ জানাতে আসা টিকেটপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষের সঙ্গেও স্টেশন ম্যানেজার মারমুখী আচরণ করেন। শনিবার (২৫ মে) দুুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, টিকেটপ্রত্যাশী কয়েক ব্যক্তি রাতভর অপেক্ষায় থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকেট না পাওয়ায় স্টেশন ম্যানেজারের দপ্তরে অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু এর কোন সমাধান না দিয়ে উল্টো বিতণ্ডায় জড়ান স্টেশন ম্যানেজার। ওই সময় ম্যানেজারের কক্ষে ছিলেন মহানগর কৃষক লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনসহ আরও কয়েকজন।

একপর্যায়ে আলমগীর হোসেন স্টেশন ম্যানেজারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা সব টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। অথচ রাতভর লাইনে থেকেও মানুষজন টিকেট পায় না। আপনারা পাবলিক সার্ভেন্ট। আমাদের রক্তের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। অথচ আমাদের সেবা না দিয়ে রেলওয়েকে বাপদাদার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। আর অভিযোগ দিতে আসলে খারাপ ব্যবহার করেন। এই অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?’

এ সময় ক্ষুব্ধ স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ‘আমরাও ঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রম করে বেতন পাই। সীমিত টিকেট বিক্রি হয়ে গেলে আমাদের কী করার আছে?’

ওই সময় নাজমা আক্তার নাজু নামে এক নারী টিকেট না পাওয়ায় স্টেশন ম্যানেজারের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।

একপর্যায়ে স্টেশন ম্যানেজার জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য অফিস থেকে বের হতেই সেখানে টিকিট না পাওয়া আরো কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে টিকেট কালোবাজারির কথা তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগের সূত্র ধরে কৃষক লীগ নেতা আলমগীর আবারো কালোবাজারে টিকেট বিক্রির জন্য স্টেশন ম্যানেজারকে দোষারোপ করেন। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি কৃষক লীগ নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কী পেয়েছেন আপনি। রেলওয়ে, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাই রাতদিন কাজ করছে। আর আপনি উল্টো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন।’

এ সময় ক্ষুব্ধ স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষক লীগ নেতা ওই সময় পিছু হটেন। এরপর স্টেশন ম্যানেজার নামাজ পড়তে চলে যান।

কৃষক লীগ নেতা আলমগীর হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্টেশনে টিকেট কিনতে এসেছিলাম। এসে দেখি অনেকেই টিকেট না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি স্টেশন ম্যানেজারের কথা বলতে তার দপ্তরে যাই। কিন্তু তিনি আমার কথার সদুত্তর না দিয়ে উল্টো খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন। আমি তাকে কলোবাজারে টিকেট বিক্রির অভিযোগ তুলতেই একপর্যায়ে মারমুখী আচরণ শুরু করেন। আমার মতো একজন রাজনীতিকের সাথে যদি এমন দুর্ব্যবহার করতে পারে তাহলে অন্যদের কথা বলার সুযোগ কোথায়?’

স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ানো নাজমা আক্তার নাজু জানান, ‘আমি চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেসের টিকেট কিনতে এসেছি সকালে। লাইনে আমার সামনে ৫০-৫৫ জন উপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে আমার মতো অনেকেই টিকেট পায়নি। বিষয়টি নিয়ে স্টেশন ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ধমক দিয়ে বলেন, অভিযোগ শোনার সময় নেই তার।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাতের বেলায় টিকেট বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ করেছিল কয়েকজন। এখানে রেলওয়েসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন কাজ করে। সেই সুযোগ নেই। কয়েকজন এসব অভিযোগ করতে এসে আমার সাথে অশোভন আচরণ করতে থাকে।’ প্রায়ই টিকেট প্রত্যাশীদের এসব আচরণের মুখোমুখি হতে হয় বলে জানান স্টেশন ম্যানেজার।

এসসি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!