চট্টগ্রামের বায়েজিদে অন্যের জায়গায় ঘর তুলে কোটি টাকা চাঁদা দাবি!

কারও খালি জায়গা দেখলেই রাতারাতি টিনের ঘর তৈরি করে দখলে নেয়, তারপর দখল ছাড়তে কোটি কোটি টাকা চাঁদা দাবি। দিদার-মহিউদ্দিন-পানি জসিমের দাপটে অসহায় বায়েজিদবাসী।

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্য। শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে ছিঁচকে সন্ত্রাসী সবাই তাদের অপকর্মের জন্য এখন বেছে নিচ্ছে পাহাড়ঘেরা ওই এলাকাটিকে। তাদের প্রকাশ্য পরিচয় সরকার দলীয় নেতা কিন্তু রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জমি দখল ও চাঁদাবাজিতেই মেতে থাকে তারা। কারও খালি জায়গা দেখলেই রাতারাতি টিনের ঘর তৈরি করে দখল করে চক্রটি, তারপর দখল ছাড়তে কোটি কোটি টাকার চাঁদা দাবি করে বসে। এ চক্রের কাছে অসহায় হয়ে আছেন নগরীর বায়েজিদবাসী। এই চক্রটির মূল হোতা হলেন, যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী দিদার ও মহিউদ্দিন। তাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে এলাকায় ত্রাস হয়ে উঠেছেন যুবলীগ নেতা জসিম (প্রকাশ পানি জসিম), মিল্টন বড়ুয়া ও মোস্তাফা কামাল পাশা (প্রকাশ ইয়াবা মোস্তাফা)।

Baizid-Banglabazar

এ এলাকায় সহজেই পাওয়া যায় অস্ত্র, ভাড়ায় মেলে খুনিও। চট্টগ্রাম চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়, শিল্প প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম, কেডিএস গ্রুপ, কেএসআরএম, বায়েজিদ স্টিল ও আমিন জুট মিলের মতো বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কারখানা থাকায় এখানে চাঁদাবাজি নিত্যদিনের ঘটনা। এ এলাকা দিয়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ ২৯টি রুটের বাস চলাচল করায় অস্ত্র চোরাচালানও এখানে খুব সহজ। নিয়মিত বসছে মাদকের হাটও। এসব অপরাধীকে ধরতে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ অঞ্চলের পুলিশও হিমশিম খায়। জমি দখল ও শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের টাকা বিনিয়োগ করা হয় মাদকের ব্যবসায়। এখানকার অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসার বড় একটি চক্র পুরো শহরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে এ চক্রটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক!

গত সোমবার রাত ৩টার দিকে বায়েজিদের বাংলা বাজারের একটি খালি জায়গা দখল করে নিয়েছে ওই চক্রটি। প্রায় ২ একর ৭৬ শতকের খালি জায়গার একপাশে টিনের বেড়া দিয়ে একটি ঘর তৈরি করে তারা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওইদিন রাতে প্রায় ৩শ লোক ধারালো অস্ত্র ও জায়গা দখলের জন্য টিন ও সিমেন্টের খুঁটি নিয়ে ওই জায়গায় আসে। তারা সেই জায়গার কেয়ারটেকারকে হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। তারপর টিনের বেড়া দিয়ে একটি অংশ ঘেরাও করে এবং একটি দুইচালা টিনের ঘর তৈরি করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জায়গাটি ছৈয়দ কবীর উদ্দীনের ১১ জন ওয়ারিশ থেকে ক্রয় করেন বিপনি বিতান সমবায় সমিতি আবাসিক প্রকল্প লি.। পরে ২০১৬ সালে এ সমুদয় জায়গা ক্রয় করেন ৮ ব্যক্তি। তাদের কাছে পুরো জায়গাটির দখলস্বত্ব বুঝিয়ে দেন বিপনি বিতান সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ। সেই সময় থেকেই জায়গাটি সর্বশেষ মালিকপক্ষের দখলে ছিল। তবে সোমবার রাতে হঠাৎ টিনের বেড়া দিয়ে জায়গার একটি অংশ দখল করে সন্ত্রাসী মহিউদ্দিন-দিদার চক্র।

গতকাল বিকালে ওই জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো জায়গার পাহাড়ির অংশের দিকে টিনের বেড়া দেওয়া হয়েছে। তার মাঝে একটি টিনের দু চালা ঘর। দেখতে মাঠ সদৃশ জায়গাটির টিনের বেড়া দেওয়া পাশটায় ২০ জনের মত তরুণ ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু দেখতে ক্রিকেট খেলার মত মনে হলেও মূলত তারা পাহারাই দিচ্ছে। কেননা পুলিশ যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবাই ঠাঁই বসেই ছিল। বায়েজিদ থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ফোর্স নিয়ে ওই জায়গায় গেলে সবাই ক্রিকেট খেলার ভান ধরে। কেননা তাদের মধ্যে ক্রিকেট খেলার ব্যাট থাকলেও কোনো বল ছিল না। পুলিশের দৃষ্টি এড়াতে মূলত তারা এমন ভান ধরে। এ সময় কথা হয় বায়েজিদ থানার এসআই জহিরুলের সাথে। তিনি জানান, জায়গার মালিকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখানে এসেছি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, গতকাল (সোমবার) গভীর রাতে শ’তিনেক লোক এসে টিনের বেড়া ও ঘর তৈরি করেছেন। সকাল থেকে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলেন, এই এলাকায় এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে। খালি জায়গা পেলেই টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে মহিউদ্দিন-দিদার চক্র। পরে শিল্প গ্রুপ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। সেখানে পুলিশের ফোর্স পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা যে কোনো সময় অভিযান চালাব।

ভূমিদস্যু মহিউদ্দিন-দিদার চক্রের কথা উল্লেখ করে ওসি আরও বলেন, আমাদের কাছে প্রায় সময় অভিযোগ আসছে চক্রটির বিরুদ্ধে। পুলিশ তাদের কর্মকা- পর্যবেক্ষণে রাখছে। যে কোনো সময় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপরাধীকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!