গণইফতার/ বিবিরহাটের খানকায় হাজার মানুষ এককাতারে

আসরের পর থেকে বাড়তে থাকে ইফতার করতে আসা মানুষের সংখ্যা। সারি সারি ইফতারের প্লেট সাজানো। সাত রকমের বাহারি খাবার। প্লাস্টিকের বাটিতে সেমাই, বাটিভরা লেবু ও রুহ আফজার শরবত। স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যস্ততার শেষ নেই। আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্স গাউসিয়া কমিটির শতাধিক সদস্য প্রতিদিন স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। সারাদিন রোজা রেখেও কাজ করতে যেন ক্লান্তি নেই তাদের।

ইফতার করতে আসা হাজারো মানুষের মাঝেও কোনো কোলাহল নেই। সবাই মনোযোগ দিয়ে মাওলানা সোহাইল আনসারি ও মাওলানা ইলিয়াস আল কাদেরীর রমজানবিষয়ক বয়ান শুনছেন। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই।

রোববার (১২ মে) নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহরের বিবিরহাটের নাজিরপাড়ার আলমগীর খানকায় গণইফতারের দৃশ্য এটি। সৈয়দ আহমদ সিরিকোটি ১৯৫৪ সালে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৪ সালে আলমগীর খানকাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে গণইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিদিন দুই হাজার মানুষের ইফতার। ১১তম রমজানে খতমে শরীফের দিন পাঁচ হাজার রোজাদারের ইফতার আয়োজন করা হয়। সেদিন খানকার নিচতলা, দোতলা ও তার আশপাশ ছাপিয়ে যায় মানুষের ভিড়ে। আনজুমান ওরশ কমিটি গণইফতার দেখাশোনা করে।

bibirhat-khanka
প্রতিদিন দুই হাজার মানুষের ইফতার।

আয়োজক কমিটির সচিব সাদেক হোসেন পাপ্পু বলেন, পুরো মাসের ইফতারির জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট। এই বাজেট প্রয়োজনে বাড়ানো হবে। আয়োজন উপলক্ষে অনেকে দান করে থাকেন। কাদেরিয়া তরিকার ভক্ত ও সাধারণ মানুষ সওয়াবের নিয়তে এখানে অংশ নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন মানুষ প্রায় ৫০০ জনের ইফতারি সরবরাহ করে থাকেন।

আয়োজনের অন্যতম সহায়ক বাবুর্চি নজরুল বলেন, সকাল থেকে ১২ জন সঙ্গী নিয়ে রান্নার কাজ শুরু করি। চনা, পিঁয়াজু, বেগুনি ও সেমাই তৈরি করতে করতে দুপুর হয়ে যায়। কাজটা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। আমি এটি সওয়াবের নিয়তে করি। এতগুলো মানুষের ইফতার রান্না করতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপার।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাহফুজুর রহমান, হাফিজুর রহমান, আলতাফ হোসেন ও শাহানুর শাহিন দলবদ্ধ হয়ে চনা, বেগুনি, পিঁয়াজু, মুড়িসহ ইফতারি উপকরণের প্লেট সাজাচ্ছিলেন আর হাবিব, সাবের ও কানন প্লাস্টিকের বাটিতে সেমাই সাজিয়ে রাখছেন।

কাট্টলি থেকে ইফতার করতে আসা ফলমন্ডির ব্যবসায়ী মোস্তফা আমিন বলেন, জামেয়া আলমগীর খানকাহ আমাদের ঈমানের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিবছর এখানে ইফতার করতে আসি। এখানে এসে আত্মতৃপ্তি পাই। হাজারো মানুষের সাথে ইফতার করা অনেক আনন্দের। সময় পেলেই এখানে চলে আসি।

লালিয়ারহাটের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী সৈয়দ শরিফুল জানান, আমি ৩০ দিন ইফতারে অংশগ্রহণের নিয়ত করেছি। বাকিটা হায়াতের ওপর নির্ভর। আমরা যদি এইরকম ধর্মীয় আয়োজন করতে পারি তাহলে সমাজ থেকে বৈষম্য কমে শান্তি ফিরে আসবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!