গণইফতার/ আন্দরকিল্লা মসজিদে নেই ধনী গরিবের ভেদাভেদ

দস্তরখানায় সাজানো ইফতারের প্লেটের সারি। আট রকমের ইফতার দেওয়া হয়েছে প্রতিটি প্লেটে। যতই ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ইফতার করতে আসা মানুষের সংখ্যা। ধীরে ধীরে বাহারি ইফতারের সামনে এসে বসছে রোজাদার। দেড় হাজার মানুষের এত বড় আয়োজন, কোথাও নেই কোন কোলাহল। এ যেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এক মিলনমেলা। এখানে থাকে না ছোট-বড়, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ। যে কেউ এ মসজিদে ইফতারে অংশ নিতে পারেন।

Andarkilla-Mosque-Iftar

দৃশ্যটি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের। যেখানে পুরো রমজান মাসজুড়ে চলে হাজার হাজার রোজাদারের ইফতারের আয়োজন। রমজানের প্রথম দিনের পর আজ বুধবারও দেড় হাজার রোজাদারের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। রোজা বাড়ার সাথে সাথে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজারে। প্রতিবারই এমনটি দেখা যায়।

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোছাইন তাহের জবেরী আল মাদানীর প্রচেষ্টায় ২০০৭ সালে শুরু হয় এই গণইফতার কার্যক্রম। এটি চালু রয়েছে এখনও।

কথা হয় আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিবের একান্ত সচিব মো. হাসান মুরাদের সাথে। তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে এ মসজিদে ইফতারের আয়োজন হয়ে আসছে। এখানে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। এখান থেকে মুসলমানদের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও ইফতার সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান রেখে আমরাও ইফতার সরবরাহ করি।

Andarkilla-Mosque-Iftar

হাসান মুরাদ আরও বলেন, ইফতারের এ আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা করেন বিত্তশালীরা। তারা কেউই দানের কথা প্রচার করেন না। আবার অনেক যুবক ইফতার আয়োজনের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।

বুধবার (৮ মে) দুপুরে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের একপাশে বাবুর্চি ইয়াছিন বাবুল ১২ জন সহযোগী নিয়ে ইফতারের বিভিন্ন পদ রান্না করছেন। তিনি বলেন, আমি গত ১১ বছর ধরে ইফতার রান্নার কাজে সম্পৃক্ত আছি। এখানে কাজ করতে গিয়ে আমার অন্যরকম ভালো লাগে। হাজার হাজার মানুষের রান্না করতে গিয়ে আমার একটুও ক্লান্তি লাগে না।

তিনি আরও বলেন, সকাল ৬ টা থেকে রান্না শুরু করেছি। প্রথম দিনে চনা, আলুর চপ, জিলাপি তৈরি করেছি। আজ থেকে ইফতার আয়োজনে অনথনও তৈরি করেছি।

বাবুর্চির সহযোগী মাঈন উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে। প্রতিবছর রমজান এলেই আমি লাকসাম থেকে চট্টগ্রামে চলে আসি। এত বড় আয়োজনে কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।

আছরের নামাজ শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, একদল স্বেচ্ছাসেবক রান্না করা ইফতারিগুলো প্লেটে তুলছিলেন। ২৫ জনের অধিক কর্মী একসাথে কাজ করলেও নেই কোন কোলাহল। সবাই আন্তরিকতার সাথে অল্প সময়ের মধ্যেই ইফতারগুলো প্লেটে সাজিয়ে তুলেছেন।

শওকত আনোয়ার নামে এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি রমজানের জন্য। রোজাদারদের খেদমত করতে পারা অনেক সৌভাগ্যের। এখানে অনেক যুবক আসে ইফতারসামগ্রী পরিবেশনের জন্য।

মসজিদের মুসল্লি পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা জয়নাল আবেদীন বলেন, মসজিদের খতিব ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোছাইনের নেতৃত্বে প্রতি রমজানে ইফতারের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে এক ধরনের ভাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হয়। ইফতার গ্রহণের সময় ধনী-গরীবের কোন ব্যবধান থাকে না। আলাদা আলাদা প্লেটে ইফতার পরিবেশনের পাশাপাশি বড় ডালায়ও ইফতার পরিবেশন করা হয়। একটি ডালায় একসাথে ১০ জনের মতো একসাথে ইফতার করতে পারে।

ইফতার করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, হাজার হাজার মানুষের সাথে ইফতার করার এক ধরনের আত্মতৃপ্তি আছে। সময় পেলেই আমি এখানে ইফতার করতে চলে আসি।

আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ইফতার আয়োজন আমাদের মধ্যে সকল ব্যবধান দূর করে দেন। এই শিক্ষা যদি আমরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে সমাজ থেকে বৈষম্য কমে আসবে।

এসসি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!