এলপি গ্যাসের বাজার হারাচ্ছে বিপিসি, বাজেটের পর থেকেই সরবরাহ বন্ধ

অব্যবস্থাপনা ও রক্ষণশীল নীতির কারণে ক্রমশ এলপিজি গ্যাসের বাজার হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এর বিপরীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপিসির এলপিজি বাজার দখল করে নিচ্ছে। এতে ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

চাহিদার তুলনায় ডিলারদের কাছে সরবরাহ করা এলপি গ্যাসের পরিমাণ খুবই কম। এর ফলে যানবাহন খরচ, গুদাম ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, সিলিন্ডার সংরক্ষণ খরচের যোগান দিয়ে বিপিসির ডিলারদের ব্যবসা পরিচালনা করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত এলপি গ্যাস নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাকিতে পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করে অতি দ্রুত বিপিসির এলপিজি বাজার দখল করছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এসওএসিএল-এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে প্রায় চার হাজার ডিলারের মাধ্যমে সরকারি এলপি গ্যাস বাজারজাত করে আসছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও (এসওএসিএল) ডিলারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মানুসারে এলপিজি স্থাপন থেকে উত্তোলন করে ক্রেতাদের কাছে গ্যাস পৌঁছে দিচ্ছে। বিপিসির এলপিজির গুণগত মান এবং পরিমাপ যথাযথ থাকার প্রেক্ষিতে এলপিজি চাহিদা ক্রেতার কাছে বেশি।

জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় ডিলারদের কাছে সরবরাহ করা এলপি গ্যাসের পরিমাণ খুবই কম। এর ফলে যানবাহন খরচ, গুদাম ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, সিলিন্ডার সংরক্ষণ খরচের যোগান দিয়ে বিপিসির ডিলারদের ব্যবসা পরিচালনা করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত এলপি গ্যাস নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাকিতে পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করে অতি দ্রুত বিপিসির এলপিজি বাজার দখল করছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে যে হারে এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে, সে তুলনায় সরকারি এলপি গ্যাসের যোগান অপ্রতুল এবং অত্যন্ত সীমিত। বর্তমানে বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে মাসে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে আনুপাতিক হিসাবে সরকারি এলপি গ্যাস দুই শতাংশ যোগান দিতেও সক্ষম হচ্ছে না।

এলপি গ্যাস পরিবেশকরা জানান, স্বল্পপরিমাণ এলপি গ্যাস বিপণনের জন্য যদি সঠিক পরিকল্পনা না থাকে তাহলে পর্যায়ক্রমে বিপিসির নিয়োগকৃত ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা সরকারি এলপি গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে বেসরকারি খাতের এলপি গ্যাস বিক্রির দিকে ঝুঁকে পড়বে।

চলতি অর্থবছরে এলপি গ্যাস আমদানি ও বিক্রির ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট ও ট্যাক্স আরোপ করায় মূল্য বাড়বে বলে মনে করে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

এলপি গ্যাস পরিবেশক সমিতি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর বিপিসির অধীন বিপণন কোম্পানিগুলো (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এসওএসিএল) এখন পর্যন্ত সকল ধরনের এলপি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

এ ক্ষেত্রে এলপি গ্যাস পরিবেশকদের বক্তব্য হচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে এলপি গ্যাসের মূল্য গত কয়েক মাসে ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে, সেখানে সরকারি এলপি গ্যাসের চাহিদার পরও মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। এর ফলে সরকারি এলপি গ্যাসের বাজার সংকুচিত হয়ে বিক্রি কমবে। তাই বিপিসি উৎপাদিত এলপি গ্যাস কোন প্রকার মূল্য বৃদ্ধি না করে দ্রুত সরবরাহ দেওয়ার দাবি আমাদের। অন্যথায় সরকারি গ্যাস বাজার হারানোর ফলে বিপিসি ও ডিলাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এলপি গ্যাস পরিবেশক সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি খোরশেদুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর বিপিসির এলপি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এর ফলে বিপিসি বাজার হারাচ্ছে। আমরা ডিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ডিলারদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং মানসম্মত এলপি গ্যাস ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর স্বার্থে এলপি গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি পর্যায়ে এলপি গ্যাস বাজারজাতকরণের সংকট ও অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে আমরা বিপিসি চেয়ারম্যানের পদক্ষেপ আশা করছি।’

বাজেটের পর এলপি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিপিসির পরিচালক (মার্কেটিং) সরোয়ারুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা সরকারকে জানিয়েছে। আলাপ-আলোচনা করেছি। আশা করি, দুয়েকদিনের মধ্যে সমাধান হবে। বিপিসি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট কাঠামোটা পরিবর্তন হওয়া জরুরি। না হলেও আগের দামে আমরা এলপি গ্যাস সরবরাহ করবো সরকারের অনুমতি পেলে। এতে আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবো যদিও।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!