সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ঢাকায় গিয়ে মামলা করবো : ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশে ড. কামাল

সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ঢাকায় গিয়ে মামলা করবো : ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশে ড. কামাল 1বিশেষ প্রতিবেদক : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মিছিল সমাবেশ জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার পদে পদে সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ঢাকায় গিয়ে মামলা করবো। লালদিঘীতে সমাবেশ কেন করতে দেয়া হচ্ছেনা তা খুঁজে বের করবো। এর কৈফিয়ত আদায় করবো।
তিনি শনিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে নগরের নুর আহমদ সড়কে ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
তিনি আরো বলেন, সংবিধানে লিখা আছে দেশের মালিক জনগণ। সরকার সেবক। আর সেবকরা মালিককে কষ্ট দিচ্ছে। লালদিঘীতে সমাবেশ হলে সবাই বসে কথা শুনতো। রাস্তার উপর সমাবেশে এসে একটানা ৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনা কষ্টকর। যারা এই কষ্ট দিলো তাদের বিচার জনতার আদালতে হবে।
মহাসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তেব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন, ‘আমি যদি নাও থাকি, জাতীয় ঐক্য গড়েতুলে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে হবে।’ স্বৈরাচার সরকারের কারাগারে আমাদের অসংখ্য নেতা কর্মী বন্দী রয়েছে। গুম, খুনের শিকার অসংখ্য নেতাকর্মী। সারা দেশে নতুনকরে ৫ হাজার মামলা দিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। কারণ সরকার জানে তাদের পায়ের নীচে মাটি নেই। তাই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বন্দী করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু বস্তবতা হচ্ছে, জনগণকে জিম্মি করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বন্দুক, পিস্তল দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বপ্ন পাকিস্তানীরাও দেখেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ দশ বছর দেশের মানুষকে এই স্বৈরাচারী সরকার জিম্মি করে রেখেছে। এবারও তারা জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু জনগণ ভাঙ্গা নৌকায় আর উঠতে চায় না। এই জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাদের হারানোর কিছু নেই। অন্যায় এবং অপরাধকে ভিত্তি করে সরকার দেশ পরিচালনা করছে। জনগণ তা আর মেনে নিবে না।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাসদের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশের জনগণ আজ ঐক্য গড়েছে। স্বৈরাচারী সরকারকে একদিন জনগণ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠে না। আমরা এখন লড়াইয়ে নেমেছি। আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে এ লড়াইয়ে জিততে হবে।
তিনি বলেন, সরকার আমাদের সঙ্গে আলাপ না করে যদি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে তাহলে তারা বড় ভুল করবে। তখন আমরা মনে করে নিব, সরকার বিনা নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে চায়। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছেন আপনারা। আপনাদের ক্ষমা নাই। পাকিস্তান সরকার মাওলানা ভাষানীকে গরু চুরির মামলা দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিল সিঁধেল চুরির মামলা। কিন্তু লাভ হয়নি। বাংলার জনগণ তাদের এ দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। আপনাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। মিথ্যা মামলা দিয়ে এ দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার পায়তারা বন্ধ করুন।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাত দফা নিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচন দিতেই হবে। এর বাইরে কোন চক্রান্ত জনগণ মেনে নিবে না। পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনারা সরকারের বাহিনী নন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নন। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। জনগণের পাশে থাকুন। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানির পথ থেকে সরে আসুন।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আওয়ামী লীগ এ অসহিষ্ণু রাজনৈতিক দল, এ সরকার স্বৈরাচারী সরকার। তাদের একগুয়েমির কারণে জনগণ ভোটের অধিকার হারিয়েছে, গণতন্ত্র হারিয়েছে, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যম হারিয়েছে স্বাধীনতা। যে কোন স্বৈরাচারকে তাড়াতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। ড. কামালের নেতৃত্বে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমাদের সঙ্গে থাকা সব নেতাই মুক্তিযোদ্ধা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ দেশে গণতন্ত্রকে সু-সংহত করতে মাঠে নেমেছি। আর সরকার একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। সে লক্ষ্যে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা।
সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার পাকিস্তানী শাসন-নীপিড়নকে হার মানিয়েছে। সরকার এখন শুধু ভয় পায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন নিজের ছায়াকেও ভয় পান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যা হয়েছে আপনার সঙ্গে তা হবে না। অতীতের মত ড. কামাল, ব্যারিস্টার মইনুল, মাহমুদুর রহমান মান্নারাই আপনাকে বাঁচাবে।
তিনি আরো বলেন, মাওলানা ভাষানীর জন্ম না হলে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু হতে পারতেন না। প্রতিহিংসা থেকে সরে আসুন। গুনীজনদের সম্মান করুন। দেশের সকল বুদ্ধিজীবি আমাদের সাথে আছেন। আগামী দশদিনের মধ্যে ঐক্য প্রভাব দৃশ্যমান হবে।

সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ঢাকায় গিয়ে মামলা করবো : ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশে ড. কামাল 2সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পেশী শক্তির ব্যবহার করে গণ বিশ^বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে পঙ্গু লিমনের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে ছাত্রীদের উপরও। একজন নারী সাংবাদিকের জন্য মফস্বলের মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল কারাগারে। আর গণ বিশ^বিদ্যালয়ের নারীদের উপর যে হামলা হল এ জন্য পুলিশ অভিযোগও নিল না। এ হল বর্তমান সরকারের বিচার ব্যবস্থার প্রকৃতি।
সরকারকে ইঙ্গিত করে মান্না বলেন, তারা বলেছে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা মানবে না, আমরা বলছি মানতে হবে। তোমাদের অধীনে নির্বাচন হবে না। সব দল, সব মানুষ চায় তুমি যাও, গদি ছাড়ো, ভোট দাও। যদি তা না মানো, কি করতে হয় তা আমাদের জানা আছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতা থেকে তোমাদের নামিয়ে আনবো। তিনি বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়াকে ভয় পায় বলেই নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য সরকার ছড়াচ্ছে। আমরা বলতে এসেছি, আমাদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়। যতই চেষ্টা করুণ, লাভ হবে না। চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে জনসমুদ্র প্রমাণ করে সরকারকে জনগণ চায় না। আমরা শুধু মাত্র ভোটের দিন জনগণ ক্ষমতার মালিক মনে করি না। আমরা চাই বছরের ৩৬৫ দিনই জনগণ ক্ষমতার মালিক থাকবে।
সমাবেশে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মিন্টু, মির্জা আব্বাস, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোঃ শাহজাহান, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মীর নাছির, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রী ও নগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ কেউ কেউ শুক্রবার চট্টগ্রাম এসে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। আবার অনেকে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছান। শনিবার সমাবেশস্থলে আসার আগে শাহসূফি আমনত শাহ’র মাজার জিয়ারত করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!