রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সিনহা!

রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সিনহা! 1প্রতিদিন ডেস্ক : ছুটি নিয়ে বিদেশে অবস্থানরত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পদত্যাগপত্রে সই করেছেন বলে গুঞ্জন চলছে। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকালে সিঙ্গাপুর থেকে কানাডার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পূর্বে তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেছেন বলে পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করছে।

এছাড়া শুক্রবার রাত থেকে দেশের অধিকাংশ টিভি চ্যানেল ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন’ বলে ‘ব্রেকিং নিউজ’ প্রচার করছে। তবে পদত্যাগপত্রটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে কিনা সংশ্লিষ্ট কোনো সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, সিনহা শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চায়না-সাউথার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে রওনা দেন। কানাডায় তার ছোট মেয়ে বসবাস করছেন।

এদিক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটি শুক্রবার (১০ নভেম্বর) শেষ হয়েছে। তবে তিনি তাঁর ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েছেন কি না, সে বিষয়েও এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন প্রধান বিচারপতির তরফে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো, তাঁর দেশে ফেরা বা কাজে যোগদান বিষয়ে নতুন কোনো চিঠি পায়নি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।’ আইনমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটির মেয়াদ না বাড়ানোর ফলে শনিবার (আজ) থেকে তিনি অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য হবেন। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যিনি কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন।

আর একই বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ওনার বিষয়ে এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। এখন উনি কী করবেন না করবেন, কিছু আসে যায় না।

ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। এর আগে গত ২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবরে চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি, যার মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। ছুটিতে থাকা অবস্থায় প্রধান বিচারপতির ১৩ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে বিদেশে যাওয়ার এবং ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছা পোষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। গত ১০ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে পাঠানো ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে। তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারের সঙ্গে এসকে সিনহার টানাপড়েন সৃষ্টি হয় অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ নিয়ে। এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তোলেন এসকে সিনহা।

তবে সর্বশেষ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের পর সরকারের সঙ্গে এসকে সিনহার সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়। এই রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সৃষ্টি হয় তুমুল বিতর্ক। সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে রায়ে এসকে সিনহার পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে।

এরপর আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটাতে গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। আইনমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রধান বিচারপতি অসুস্থ’ এই দাবি করার প্রেক্ষিতে এসকে সিনহা বিদেশ যাওয়ার আগে সেই রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। এই অভিমান অচিরেই দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান এসকে সিনহা। তার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। গত ২ অক্টোবর একমাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তিনি ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চান বলেও রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!