ভারতের গরুময় রাজনীতি নিয়ে অনলাইনে আলোচনার ঝড়

cow2

বেশ কিছুদিন ধরে এ উপমহাদেশের খবরকে দখলে রেখেছে ভারতীয় গরু। গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রে গরু জবাই ও খাওয়া নিষিদ্ধ করার পরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার তুফান চলছে। ২ এপ্রিল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশিদের গরু খাওয়ার ওপর বিএসএফকে নজরদারি করতে বলায় ফেসবুকে আলোচনার ঝড় উঠেছে। এটাকে কেউ কেউ হাস্যকর আবার কেউ কেউ বাংলাদেশি কৃষকদের জন্য সুখকর বলে মানছেন।

অবশ্য মহারাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে খোদ কলকাতার ‘রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী’ ও ‘সুভাষ চক্রবর্তী ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি সংগঠন। সংগঠন দুটি গরু নিষিদ্ধের প্রতিবাদে মাংসভোজের এক অভিনব ইভেন্ট আয়োজন করে। ইভেন্টের নাম- ‘স্বাধীন দেশ, স্বাধীন রুচি, স্বাধীন খাদ্যাভ্যাস।’ অনুষ্ঠানটির জন্য কলকাতার মুসলিম ইনস্টিটিউট ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তবে সর্বশেষ খবরে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, পুলিশ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানটি বাতিল করেছে।

অনুষ্ঠানটি বাতিল করায় ক্ষিপ্ত হন অনুষ্ঠান আহ্বায়ক ফৈয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, ধর্মীয় উস্কানি ও সংকীর্ণ রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কোনও সরকার কারও খাদ্যাভ্যাস ঠিক করে দিতে পারে না এটাই ছিল আমাদের প্রতিবাদের উদ্দেশ্য। রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘মানুষের খাদ্যাভ্যাসে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায় না। বহু গরিব মানুষের খাবারে গোমাংস হল প্রোটিনের একমাত্র উৎস। অনুষ্ঠানটি বাতিল করায় কলকাতাজুড়ে এখনো সমালোচনার ঝড় বইছে।

বাংলাদেশে সেই ঝড় অবশ্য শুরু হয়েছে ২ এপ্রিল থেকে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর। ভারত সেদেশের গুরু বাংলাদেশে আসতে দেবে না। এতে কি বাংলাদেশিদের গরু খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। মোটেই না। বরং এই সিদ্ধান্তকে অনলাইন এক্টিভিস্টরা স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ ইন্ডিয়ার গরু এদেশে নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশি কৃষকরা লাভবান হবে। তারা তাদের খামারের গরুগুলোকে বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাবে।

ভারতে গরু নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলেছেন ওয়ারিস রব্বানি নামের এক ফেসবুকার। তিনি লেখেন, দেবতাদের জীবন বাচানোর আপ্রাণ অভিযান চলছে পাশের দেশে। দেবতারা অবশ্য কিছুই বুঝতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না। তারা নিশ্চিন্তে হেলেদুলে চলছেন অজানার পথে।

বিশিষ্ট ব্লগার আরিফ জেবতিক ফেসবুকের একটি পোস্টে লেখেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসনের সেøাগান তুলে ক্ষমতায় আসা বিজেপির এখন নিত্যদিন কাটে মুসলমানকে হিন্দু বানানোর কর্মসূচিতে, বিজ্ঞানসভায় দেবদেবিদের নাম জপে এবং চিড়িয়াখানার বাঘকে গরুর বদলে মুরগি খাইয়ে। এদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ইন্ডিয়ার গরু চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার, যাতে করে বাংলাদেশের মুসলিমরা গরু খেতে না পারে। আমি তার এই সিদ্ধান্তের প্রথম অংশকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের একটি বড় টাকা চলে যায় ইন্ডিয়ান গরু কিনতে গিয়ে, সীমান্তে এ নিয়ে নিত্য কোলাহলে বাংলাদেশীরা বিএসএফ এর গুলির মুখে পড়ে। সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে এদেশে গরু মোটাতাজাকরণ বা অন্যান্য উপায়ে গরু পালন করে কৃষকরা বিপদে পড়ে, ঈদ-উল-আযহার সময় ইন্ডিয়ার গরুর ভিড়ে দেশি কৃষকরা পূঁজি হারিয়ে বিপাকে পড়ে। ইন্ডিয়া যদি গরু চোরাচালান বন্ধ করতে পারে তাহলে তারা তাদের বুড়া গরুগুলোকে নিয়ে যা খুশি করুক-সাড়ে ১৪ কোটি মুসলমানদের জন্য বাংলার ঘরে ঘরে গরু পালা হোক। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়, আমার কৃষকও দুটি পয়সা আয় করতে পারে।

মাহিন সরকার নামের এক ফেসবুকার লিখেছেন, ইন্ডিয়া মনে করেছে তাদের গরু আসতে না দিলেই এদেশের মানুষ গুরু খেতে পারবে না! বিষয়টা খুবই হাস্যকর।

তামান্না হাফিজ বলেন, ভারতীয় গরু আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার ভালোই লাগছে, এদেশের কৃষকরা তাদের গরুর ন্যায্য দাম পাবে।

আদিল আরমান নামের এক ব্লগার লিখেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন কুকুর ইদুরও খাওয়া হচ্ছে সেখানে এসব দেশ রুচিশীল খাবার গরুর গোশত নিষিদ্ধ করছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

কেউ কেউ গরু নিষিদ্ধের ফলে বাংলাদেশে থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করতে বলেছেন। যাতে তারা ইলিশ খেতে না পারে।

ভারতে বিজেপি সরকার কর্তৃক গরু নিষিদ্ধকে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি ডেরেক ওব্রায়েন যৌন হেনস্থার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও গরুর মাংস নিষিদ্ধের সমালোচনা করেছেন বলিউডের প্রায় বিশজন শিল্পী। -আ স

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!