পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা : প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্ধী : সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ
রাজীব সেন প্রিন্স, বিশেষ প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা অাক্তার মিতুকে (৩২) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, রোববার সকাল পৌনে ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড় বাসা থেকে ১০০ গজ দুরে ও আর নিজাম রোডে তিন আরোহীসহ একটি মোটরসাইকে মাহমুদাকে ধাক্কা দেয়। এরপর তারা ছুরিকাঘাত করে হামলাকারীরা মাহমুদার মাথায় গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে গিয়েছিলেন তিনি।
বাবুল আক্তারের প্রতিবেশী ও বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, নগরীর ও আর নিজাম আবাসিক এলাকার ‘ইক্যুটি সেনটিয়াম’ নামের একটি বাড়ির সপ্তম তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন বাবুল আক্তার। বাসায় তাঁর স্ত্রী, ছেলে আকতার মাহমুদ মাহির, মেয়ে তাবাসসুম তাজনীন ও গৃহকর্মী ফাতেমা আক্তার ছিলেন। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এসপির সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা তার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জিইসি মোড়ের নিরিবিলি হোটেলে কর্মচারী সিরাজুল ইসলাম বললেন, তার রেষ্টুরেন্টের সামনে অচেনা এক যুবক দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলো। একটু পর দ্রুতগতির একটি মোটরসাইকেল এলে যুবকটি দ্রত রাস্তা পার হয়। ঠিক সে সময় মায়ের হাত ধরে হাটা একটি ছোট্ট শিশু ও তার মাকে ধাক্কা দেয় মোটরসাইকেলটি। পরে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা যখন মাকে মারতে শুরু করে ছেলেটি তখন দৌড়ে পালাতে চাই। একটু পর গুলির শব্দ এরপর তিন যুবক মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত গোলপাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। এরপর লোকজন ছুটে এসে দেখে রাস্তায় পড়ে আছে সে মায়ের মৃতদেহ।
মা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছয় বছর বয়সী ছেলেটি বলছে, মোটরসাইকেলে যারা এসেছিল, তারা প্রথমে তাকে একপাশে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর একজন তার মাকে ছুরি মারে এবং পরে গুলি করে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ‘অতীতে বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। এতে সংশ্লিষ্টরা সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। এর জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হতে পারে। তবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনি, কারণ ইত্যাদি বেরিয়ে আসবে বললেন তিনি।
পুলিশের তদন্ত ব্যুরোর (পিআইবি) পরিদর্শক কবীর হোসেন নিহত মাহমুদার মাথার বাঁ পাশে একটি ও শরীরে একটি গুলি লেগেছে। হত্যাকারীরা খুব কাছ থেকে গুলি করেছে। আলামত সংগ্রহ শেষে সকাল সাড়ে আটটায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থলে তিনটি গুলি ও একটি গুলির খোসা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ।
ঘটনাস্থলে আসা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ জানান, একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ভাষ্যমতে এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খুনীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।