টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণ: উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী : কারখানা মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা : ১১ শ্রমিক এখনো নিখোঁজ
গাজীপুরের টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের পর আজ সোমবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী। বয়লার বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় ট্যাম্পাকো ফয়লস লিমিটেড কারখানার মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মরত নিখোঁজ শ্রমিকদের তথ্য দেওয়ার জন্য কারখানাটির পাশে যে তথ্য কেন্দ্র চালু রয়েছে সেখানকার দায়িত্বরত আবুদল মান্নান জানান, এখন পর্যন্ত কারখানার ১১ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।
গাজীপুরের টঙ্গীর টাম্পাকো কারখানায় আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত দুটি লাশ উদ্ধার করায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১-এ দাঁড়িয়েছে। গত রাতে সেনাবাহিনীর ১২ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিউল আজমের নেতৃত্বে এক প্লাটুন সেনা সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পর্যবেক্ষণ শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ সোমবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে বাহিনীটি। সেনাবাহিনীর দল প্রথমে কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তায় ধসে পড়া ভবনের অংশ সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
কারখানা মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা :
এ দিকে বয়লার বিস্ফোরণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় ট্যাম্পাকো ফয়লস লিমিটেড কারখানার মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত জুয়েল মিয়ার বাবা মো. আবদুল কাদের বাদী হয়ে গতকাল রাতে টঙ্গী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় কারখানার মালিক সিলেট-৬ আসনের সাবেক সাংসদ সৈয়দ মকবুল হোসেনকে প্রধান আসামি এবং আরও সাতজনের নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখনো নিখোঁজ ১১ শ্রমিক :
গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মরত নিখোঁজ শ্রমিকদের তথ্য দেওয়ার জন্য কারখানাটির পাশে একটি তথ্য কেন্দ্র চালু করেছে। কেন্দ্রে দায়িত্বরত আবুদল মান্নান জানান, এখন পর্যন্ত কোরখানার ১২ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। ররিবার রাতে কারখানাটির ভেতর থেকে আরও ৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ উদ্ধারের পরও ১২ জন শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার তথ্য রয়েছে বলে জানান আবদুল মান্নান।
জানা গেছে, কারখানাটিতে শ্রমিক, কর্মচারি, কর্মকর্তাসহ ২ হাজারেরর মতো লোক ৩ শিফটে কাজ করতো। শনিবার ভোর ৬টার দিকে কারখানাটিতে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় শুক্রবার রাতের শিফটের ১২০ থেকে ১৩০ জন শ্রমিক কাজ করছিল বলে কারখানার একজন নিরাপত্তাকর্মী ঘটনার দিন (শনিবার) জানিয়েছিলেন।তবে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম আলম জানান, ৮০ জনের মতো শ্রমিক ওই সময় কাজ করছিল।
তবে শিফট পরিবর্তনের সময় হওয়ায় শনিবারে সকালের শিফটে কাজ করার জন্য অনেক তখন কারখানাটির ভেতরে প্রবেশ করেন। আর ওই সময় বয়লার বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। ফলে এ ঘটনার শিকার হতে হয় অনেককে। ঘটনার শিকার হয়ে এখনও অনেকে টঙ্গী, ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের চিকিৎসার ব্যয় সরকার বহন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে কারখানার ধ্বংসস্তুপের ভেতর নিখোঁজ হওয়া শ্রমিকরা আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ওইখানে আটকা পড়লেও তাদের জীবিত উদ্ধার হওয়া নিয়ে আশংকা রয়েছে। বয়লার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো কারখানাটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কারখানার ৪তলা ভবনসহ বাউন্ডারি দেওয়াল ধসে পড়েছে। কারখানার ভেতরে থাকা আসবাবপত্র, কাঁচামাল সবকিছু পুড়ে রীতিমত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে কারখানাটি। এমনকি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাশের একটি ৫তলা ভবনেও আগুন লেগে যায়।এ ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।
আজ সকালেও কারখানার পূর্ব পাশের ভবনের আগুন নেভানোর কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আগুনের কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী এখনো দেখা যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পানি দিয়ে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
শনিবার সকাল ৬টার দিকে টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরী এলাকার ট্যাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানার নিচতলায় বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে।
রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স
এ এস / জি এম এম / আর এস পি ::;