কে এই তামিম চৌধুরী? পাইকপাড়ার বাড়িটিতে কখন থেকে অবস্থান

তামিম আহমেদ চৌধুরী। পরিবার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা না গেলেও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তামিম তিন সন্তানের জনক। তামিম সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ চৌধুরীর নাতি। মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য।

14172068_296760077350763_183073601_n

তামিমের বাবা শফি আহমদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমান। কানাডার উইন্ডসরে থাকার সুবাদে ৩০ বছর বয়সী তামিমের বেড়ে ওঠাও সেখানে।

 

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিমের নাম আসে। হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এই তামিমকেই চিহ্নিত করেছিল পুলিশ।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস বাংলাদেশে দলের শাখাপ্রধান হিসেবে যে আবু ইব্রাহিম আল হানিফের নাম ঘোষণা করেছিল, তাকে তামিম বলেই অনেকে মনে করছিলেন। গুলশান হামলার পরই তামিমের নামটি ব্যাপক আকারে আলোচনায় আসে।

tamim

কানাডায় বেড়ে ওঠা তামিম আহমেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে জঙ্গিদের নতুন ধারায় তৎপরতার নেপথ্য ব্যাক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ, যিনি শনিবার নারায়ণগঞ্জে অভিযানে নিহত হলেন।

গত ২ অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে এসেছিল তামিম। সেসময় তার আইএস-সংশ্লিষ্টতার দাবি প্রত্যাখ্যান করে আইজিপি শহীদুল তামিমকে ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষনেতা বলে চিহ্নিত করেন।

 

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “এখানে (গুলশান হামলা) মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। নিও জেএমবির নেতৃত্ব সে দিচ্ছে। এই তামিম চৌধুরীর পর যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করেছি।” গুলশান হামলার পর ঢাকার কল্যাণপুরে যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নয়জন নিহত হয়েছিলেন, সেখানেও তামিমের অবস্থান ছিল বলে মনিরুল জানিয়েছিলেন। এরপর তামিমের বিষয়ে তথ্য দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার বাসায় জঙ্গিদের অবস্থান :

নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় তিন তলা বাড়িটি ভাড়া নিয়ে জঙ্গিদের ঘাটি গড়ে তুলেন ৫ জুলাই। এই বাড়ির আশপাশে টিনের কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। বাড়িটির মালিকের নাম নুরুদ্দীন দেওয়ান। মালিকের চাচাতো ভাই সালাউদ্দিন বলেন, তাঁর ভাই জাপানে থাকতেন। দেশে ফিরে এই বাড়িটি করেছেন। তিনতলার ভাড়াটিয়াদের কাউকে তিনি চিনতেন না বলে জানায়।

f68f1ce3ab87ed1abade8a26d3e0a032-01

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের এক সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন নিহত তিন জঙ্গির মধ্যে মানিক পাইকপাড়ার ওই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। গত ঈদের আগে মানিক দুই কক্ষের ওই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। “কল্যাণপুরের ঘটনার পরে ওষুধ ব্যবসায়ীর পরিচয়ে তারা এই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। তার মাধ্যমেই ওই বাড়িতে ওঠে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। ওই বাসায় গ্রেনেড, অস্ত্র ও গুলি মজুত করে তারা।
এর মধ্যেই শনিবার ভোরে বাড়িটি ঘিরে অভিযানে নামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিট স্টং টোয়েন্টি সেভেন’। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এক ঘণ্টার অভিযানে তামিমসহ তিনজন নিহত হন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

 

তবে অভিযানের সময় উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে।”

 

পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গিদের কাছে মোট ছয়টি গ্রেনেড ছিল। এর মধ্যে দুটি গ্রেনেড তারা পুলিশকে লক্ষ করে ছুড়ে মারে। দুটি গ্রেনেড পুলিশ নিষ্ক্রিয় করেছে। আর দুটি গ্রেনেড পাশের একটি টিনের চালের ওপর পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

 

রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!