আলোচিত মুনীর চৌধুরী এবার দুদক মহাপরিচালক

দেশের সেই সাহসী এবং আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীকে এবার দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর আগে তিনি একের পর এক ভেজাল বিরোধী অভিযান এবং সরকারী সম্পত্তি উদ্ধারে রেকর্ড করে দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছেন।

 

সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকাকালে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার অভিযানে নেমে সাহসী ভূমিকার মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তার আগে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনে দায়িত্ব পালনকালেও সাহসী ভূমিকা রাখেন। এরপর একে একে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও পদের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট), সরকারি সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার এমডি পদে দায়িত্ব পালন করেন। যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তা সর্বশেষ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এর সচিব এর দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর সরকার তাকে দুদকের ডিজি পদে নিয়োগ দেয়।munir-chowdhury_32182

 

ক্যারিয়ারের ধারাবাহিক সাহসী ভূমিকার সাফল্যে মিল্কভিটা থেকে তাকে ডিপিডিসির সচিব পদে নিয়োগ দেয় সরকার। এর প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে মুনীর চৌধুরী সেটিকে লাভবান করার উদ্যোগ নেন। রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রী, আমলা কারও চাপ-ভীতি তাকে টলাতে পারেনি। তার এ কর্মদক্ষতায় লাভবান হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই স্পেশাল টাস্কফোর্স বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে দেড় বছরে অতিরিক্ত ১১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিপুল রাজস্ব আদায়সহ দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধে অবদান রাখায় মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ সম্মাননা। সর্বশেষ তাকে সরকার দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠান দুদকের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়।

 
জানা যায়, চট্টগ্রামে ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী হিসেবে সমধিক পরিচিত এ কর্মকর্তার ক্যারিয়ারজুড়ে রয়েছে অসীম সাহসী ভূমিকার নানা স্বাক্ষর রাখেন। ২০০০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পোস্টিং হয় মুনীর চৌধুরীর। তার আগ পর্যন্ত বন্দর ম্যাজিস্ট্রেট পদটি ক্ষমতাহীন হিসেবে পরিচিত ছিল। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানতেন না ম্যাজিস্ট্রেসির ন্যায়ানুগ ক্ষমতা দিয়ে একটি বন্দরে কী অভাবনীয় পরিবর্তন আনা যায়।

 

একের পর এক সাহসী অভিযান চালিয়ে তা-ই প্রমাণ করে দেন মুনীর চৌধুরী। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার, রক্ষা কিংবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবসা নিতে প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসের পরিচয় দেন তিনি। এর মাধ্যমে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট।

 
দীর্ঘ ৬ বছর চট্টগ্রাম বন্দরসহ চট্টগ্রামের একাধিক প্রতিষ্ঠানে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মুনীর চৌধুরী এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আস্থার জায়গা করে নেন। প্রতিদিন তার অভিযানের আতংকে দিন কাটত অসাধু ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দখলদার, অন্যায়কারীদের। তার অভিযানে বন্দরে জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। বিভিন্ন সময়ে বেদখল হওয়া বন্দরের প্রায় হাজার কোটি টাকা ভূমি উদ্ধার এবং ৩০ কোটি টাকা জরিমানা আদাল করে মুনীর চৌধুরী রেকর্ড সৃষ্টি করেন।

 
জানা যায়, ২০০৩ সালে যখন একের পর এক লঞ্চডুবিতে প্রাণহানি ঘটছিল। এর কারণ ছিল অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্যবোঝাই। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কারও দাঁড়ানোর সাহস ছিল না। সদরঘাট থেকে টাগবোটে ধাওয়া করে মোবাইল কোর্ট মুন্সিগঞ্জের কাছে গিয়ে ধরে লঞ্চ কোকোকে। লঞ্চে ঢুকতে চাইলে বাধা পেলেন। বলা হলো, প্রধানমন্ত্রীর লঞ্চে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট ঢুকতে পারে না। কোনো মোবাইল কোর্ট এখানে চলে না। সেই বাধা উপেক্ষা করে লঞ্চে ঢুকে যাত্রা বাতিল করা হলো। যাত্রীদের বুঝিয়ে বলা হলো লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অপরাধ। আটক করা হলো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী পুত্রের মালিকানাধীন লঞ্চটি। এমন বিরল সাহসিকতার পরিচয় দেন ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী।

 
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) পদে দায়িত্ব নিয়েও তিনি সাহসী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। পরিবেশ দূষণের দায়ে বড় বড় প্রভাবশালীদের তিনি জরিমানা করেন এবং কারখানায় ইটিপি স’াপনে বাধ্য করেন। এরপর মিল্কভিটায়ও তিনি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে সক্ষম হন।

 

প্রতিদিন রিপোর্ট :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!