রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি জিডিপির জন্য নয় বরং দারিদ্র্য নিরসনের জন্য হোক

সমাজ সমীক্ষা সংঘের প্রাক-বাজেট গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

একটি দেশে জাতীয় বাজেটে নীতি সংস্কার এবং বাজেটের আয়-ব্যয় পরিকল্পনা দুই উপায়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনে প্রভাব রাখতে পারে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের যাত্রাপথে উত্তরণ করেছে এবং ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হবে। দেশের মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে ন্যূনতম ১২৩০ মার্কিন ডলারের সীমা অতিক্রম করে ১২৭৪ মার্কিন ডলার হয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের জিডিপি ৭% এর উপরে রয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনার অতীত সাফল্য আশাবাদী করলেও আয় বৈষম্যের বৃদ্ধি পাওয়া একটি উদ্বেগের বিষয়।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সমাজ সমীক্ষা সংঘের সভাপতি কাজী মাহমুদ ইমাম বিলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধে অর্থনীতিবিদ ড. অনন্য রায়হান উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।

সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণাধর্মী সংগঠন সমাজ সমীক্ষা সংঘের আয়োজনে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রাক্-বাজেট গোলটেবিল বৈঠক। গোলটেবিল বৈঠকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে নিজ নিজ শ্রেণী বা পেশার প্রকৃত বাজেট ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বিগত বছরগুলোতে সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হলেও যথেষ্ট নয়। রাজস্ব আয় বাড়ানো যেমন জরুরি, তেমনি এই আয় বৃদ্ধি যেন দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় সেই বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। কর নীতিতে যার কাছ থেকে কর আদায় হোক না কেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর তার প্রভাব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। প্রাতিষ্ঠানিক কর আর মূল্যসংযোজন করের প্রভাব ধনী-দরিদ্র সবার উপরে একইভাবে পড়ে, যা দারিদ্র্যবান্ধব নীতির পরিপন্থী। আর সচেতনভাবে দরিদ্র জনগণকে বর্ধিত করের বোঝা থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন।

বক্তারা আরো বলেন, আয়ের সিংহভাগ সরকার নিজের জন্য ব্যয় করছে। সাম্প্রতিককালে সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কারের একটি হল সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দের বেতনসহ সুযোগ-সুবিধা পুনর্বিন্যাস। এই পুনর্বিন্যাসের ফলে সরকারের প্রশাসনে যোগ্য মানুষের সংখ্যা বাড়বে আশা করা যায়। কিন্তু প্রশাসনের ব্যাপক রাজনীতিকরণের কারণে জবাবদিহিতার জায়গায় যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে সার্বিকভাবে এটি অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তারা বলেন, শিক্ষার গুণগত মান আর অর্থনীতির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা কাঠামোর যে সংস্কার প্রয়োজন, সেখানে বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন। অথচ বিনিয়োগের সিংহভাগ যাচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণে। অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যয়ের ফলে শিক্ষার সুযোগ বাড়বে, কিন্তু কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা না করতে পারলে, সার্বিক অর্থনীতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হবে।

সমাজ সমীক্ষা সংঘের নির্বাহী সভাপতি আহমেদ খসরুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য্য ড. সেকান্দর খান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি জনাব মাহবুবুল আলম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম এর সভাপতি তপন দত্ত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড.হোসাইন কবির, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিন হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক , সাংবাদিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম এর সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, বিশিষ্ট সংস্কৃতজন শিশির দত্ত, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি যুবনেতা রিপায়ন বড়ুয়া, ছাত্র প্রতিনিধি জি.এম তাওসীফ।

গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজ সমীক্ষা সংঘের নির্বাহী পরিচালক শিহাব চৌধুরী বিপ্লব প্রমুখ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!