কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ের গতি মন্থর

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে। তারা বলছে বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি, পণ্য বৃদ্ধি, গাড়ি আমদানি হ্রাস, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্য বন্ড-এর আওতায় আনাসহ নানা কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত নয়মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৩২ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের পার্থক্য ২২.৭৩ ভাগ কম।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাজস্ব আদায়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জনের ব্যবধান ২৭.৪০ ভাগ কম।

মার্চ মাসে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। গত ২০১৭ -২০১৮ অর্থ-বছরের মার্চ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৩ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের মার্চ মাস থেকে প্রবৃদ্ধি কমেছে ০.৮৭ ভাগ।

রাজস্ব আদায়ের হার পর্যালোচনায় দেখা গেছে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিলো ১৪.৭৩ ভাগ । ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থ-বছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে মাত্র ৫.৫০ ভাগ । এক্ষেত্রে গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হার ৯.২৩ ভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিএন্ডএফ এজেন্ট মালিক বলেন, সম্প্রতি মিথ্যে ঘোষণায় পণ্য আমদানি, ঘোষণার চেয়ে বেশি আমদানিসহ নানা জালিয়াতির কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমে যায়।

এসব বিষয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের অভিযান চলে কাস্টম হাউজে। ঘুষসহ ধরা পড়ে কাস্টমস এর রাজস্ব কর্মকর্তা। মামলা হয় একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনার পর সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামানকে বদলি করা হয়। নতুন কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন কাজী মোস্তাফিজুর রহমান।

নতুন কমিশনার যোগদানের পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। যোগদানের পরপরই ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধে তিনি বদলিসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরপরও বাড়েনি রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। নতুন কমিশনার যোগদানের প্রথম মাস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই রাজস্ব আদায় কমে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জনের হার ছিলো ৩১.০৭ ভাগ কম। গত তিন অর্থ-বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়। মার্চ মাসে এসেও রাজস্ব আদায় বাড়েনি কাংখিত মাত্রায়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। এরমধ্যে বড় বিষয়টি হলো গাড়ি আমিদানি কমে যাওয়া। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর নয়, মংলা বন্দরেও কমেছে আমদানির পরিমাণ। রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত গাড়ি আমদানি কম হওয়ার বিরুপ প্রভাব পড়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে। এছাড়াও রাজস্ব আহরণের আরেকটি অন্যতম বড় খাত পেট্রোলিয়াম আমদানিও বাড়েনি সেভাবে। গত অর্থ-বছরের তুলনায় মাত্র পাঁচবাগ আমদানি বাড়ে।

কাস্টম কমিশনার বলেন, শতভাগ রপ্তানি পণ্যের কাচামাল আসে বন্ড সুবিধায়। যার ফলে সেসব পণ্য থেকেও রাজস্ব পায় না সরকার। এছাড়া ডিসেম্বরের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন উপলক্ষে ব্যাংক টানা ব্যাংক ছুটিও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!