নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই

‘আমার এ দুটি চোখ, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার, বৃষ্টির কাছ থেকে, চাঁদের কলঙ্ক আছে, দিন যায় কথা থাকে, একটা ছিল সোনার কন্যা’ ইত্যাদি অসম্ভব জনপ্রিয় গান শুনলেই ভেসে উঠে বরণ্য সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দীর চেহারা। বাস্তবে সেই চেহারা দেখার সুযোগ এই ধরাধমে আর কারও হবে না। তিনি যে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

এর আগে, রোববার সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। শনিবার ও রোববার পরপর দুইদিন হার্ট অ্যাটাক হয় তার। হার্টে চারটা ব্লক ছিল। রোববার সকালে চারটা রিং পরানো হয়েছে।

ঢাকা ও সিঙ্গাপুরে টানা ১৮ দিন হাসপাতালের বিছানায় নিথর হয়ে পড়েছিলেন নন্দিত এ গায়ক। অবশেষে গত ৩ মে চোখ মেলেন ও মেয়ে ফাল্গুনীকে দেখে কাঁদেন। চিকিৎসকরা আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন। প্রিয় শিল্পীর সুস্থ হয়ে ওঠার সংবাদে খুশি হয়েছিলেন ভক্তরাও। এমন স্বস্তির খবরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৪ মে ও ৫ মে দুই দফা হার্ট অ্যাটাক হয় সুবীর নন্দীর।

সুবীর নন্দীর গাওয়া কিছু জনপ্রিয় গান

আমার এ দুটি চোখ
বন্ধু হতে চেয়ে তোমার
বৃষ্টির কাছ থেকে
চাঁদের কলঙ্ক আছে
দিন যায় কথা থাকে
একটা ছিল সোনার কন্যা
ও আমার উড়ালপঙ্খিরে
হাবলঙ্গের বাজারে
হাজার মনের কাছে
কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো
পাহাড়ের কান্না
সেই দুটি চোখে
তুমি যে আমার কবিতা
আমি কী দোষ করেছি
আমি কুল হারা কলঙ্কিনী
আমি পথে পথে ঘুরি
কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়
নেশার লাটিম ঝিম
এই পারে একজনা
তুমি এমনই জাল পেতেছ
তোমারই পরশে জীবন
কেঁদো না তুমি কেঁদো না
পাখিরে তুই
পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই
আশা ছিল মনে মনে
বন্ধু তোর বরাত নিয়া
গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার সিএমএইচ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সঙ্গীতশিল্পীকে। এর আগে ১৬ দিন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

১৪ এপ্রিল রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুবীর নন্দী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও কন্যা। রাত ১১টার দিকে তাকে রাজধানীর সিএমএইচে নেয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে হার্ট অ্যাটাক করেন এই নন্দিত শিল্পী। এরপর তাকে দ্রুত লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন সুবীর নন্দী।

নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তবে চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।

চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। আর চলতি বছরে সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!