কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের সব পর্যটনস্পট সরগরম, পকেট কাটছে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো

হোটেলভাড়া দ্বিগুণ, রেস্টুরেন্টে গলাকাটা দাম

বিজয় দিবসের সঙ্গে মিলেছে সাপ্তাহিক ছুটি। সবমিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল। দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার তো বটেই— বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতেও তিল ধারণের জায়গায় যেন নেই এখন। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এই সুযোগে পর্যটকের পকেট কাটছে হোটেল-মোটেল ​ও রেস্টুরেন্টগুলো।

তিনদিনের এই ছুটির বাইরে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর হোটেলগুলো পর্যটকদের কাছ থেকে আগাম বুকিং পাচ্ছে আগামী ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর এবং ৩০, ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারিরও।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে তিন দিনের টানা ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এখন রয়েছেন পাঁচ লাখেরও বেশি পর্যটক। এই সুযোগে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলো অস্বাভাবিক হারে ভাড়া আদায় করছে পর্যটকদের কাছ থেকে। রেস্টুরেন্টগুলোতেও রাখা হচ্ছে গলাকাটা দাম। অন্যদিকে টমটম কিংবা রিকশার মতো যানবাহনগুলোও হাঁকাচ্ছে ইচ্ছেমতো ভাড়া। ৪০ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকাও রাখা হচ্ছে সেসবে।

কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের সব পর্যটনস্পট সরগরম, পকেট কাটছে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো 1

পর্যটকরা অভিযোগ করছেন, কক্সবাজারে সাধারণমানের রেস্টুরেন্টগুলোতেও কেবল ডাল-ভাতের দাম রাখা হচ্ছে ৪০০ টাকা। ভাতের সঙ্গে সামান্য আলুভর্তা দিয়েই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে হোটেলগুলোতে রুম ভাড়া একলাফেই বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। কক্সবাজার শহর ও আশপাশে অন্তত ৫০০ হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক রাতযাপন করতে পারেন।

এদিকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌরুটের পর্যটকবাহী আটটি জাহাজের টিকিট আগেই শেষ হয়ে গেছে।

বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলোও উপচে পড়ছে পর্যটকে। মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি ছাড়াও রেমাক্রি, নাফাখুম, দেবতাখুমসহ আকর্ষণীয় সবকটি স্পটই এখন সরগরম। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোও এখন কানায় কানায় পূর্ণ। বান্দরবানে আছে শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। পর্যটক পরিবহনে রয়েছে ৪ শতাধিক চাঁদের গাড়ি।

কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের সব পর্যটনস্পট সরগরম, পকেট কাটছে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো 2

খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোও এখন জমজমাট। মূল আকর্ষণ আলুটিলা, রিছাং ঝরনা, জেলা পরিষদ পার্ক ও মায়াবিনী লেক ছাড়াও অন্যান্য স্পটগুলো গিজগিজ করছে পর্যটকে। এ কারণে খাগড়াছড়ির ৩০টি আবাসিক হোটেলে এখন একটি কক্ষও খালি নেই। খাগড়াছড়িতে আসা ৯০ শতাংশ পর্যটকদের গন্তব্য রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে। যাতায়াত সুবিধার কারণে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেকে যাতায়াত করে থাকেন।

অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার রাঙামাটিতেও নেমেছে পর্যটকের অস্বাভাবিক ঢল। এখানে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ কাপ্তাই হ্রদ ও সাজেক পর্যটনকেন্দ্র। বিশেষ করে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের অন্তত ১২৫টি রিসোর্ট ও কটেজে ঠাঁই নেই অবস্থা। শুধু বৃহস্পতিবারই (১৬ ডিসেম্বর) সেখানে অন্তত ৬ হাজার পর্যটক গেছেন। রাঙামাটি শহরে ৫৩টি হোটেল ও মোটেলে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

রাঙ্গামাটি আয়তনে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা। ১০টি ভাষাভাষীর ১১টি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক কৃষ্টি এবং প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই জেলা বাংলাদেশের পর্যটনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। রাঙ্গামাটি জেলার জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার, শুভলং ঝর্ণা, সাজেক ভ্যালী, নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট, কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্য, উপজাতীয় জাদুঘর, কর্ণফুলী কাগজ কল, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, প্যানোরমা জুম রেস্তোরা, পেদা টিং টিং রেস্তোরা, টুকটুক ইকো ভিলেজ, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স, ডলুছড়ি জেতবন বিহার ইত্যাদি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!