চবির আবাসিক হলে হচ্ছে না সরকারি কোয়ারেন্টাইন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নির্মাণাধীন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চবি শিক্ষক সমিতি ও ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রশাসন।

বুধবার (২৫ মার্চ) বিকেলে বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার।

তিনি বলেন, দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি হলে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করতে অনুরোধ করেছিল। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও শিক্ষক সমিতিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নির্মাণাধীন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে কোয়ারেন্টাইন করতে রাজি হই। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা ও এলাকাবাসীরা এটা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। তারা যেহেতু রাজি না তাই হলটিতে আর কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে না।’

এর আগে চবি শিক্ষক সমিতি ক্যাম্পাসে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর ২৫ মার্চ (বুধবার) চিঠি দেয়।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত। কারন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এর সাম্প্রতিক কোয়ারিন্টিন বিষয়ক Infection Prevention and Control guidance for Long-Term Care Facilities in the context of COVID-19 নীতিমালায় সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে, কোয়রেন্টাইনের জন্য নির্ধারিত এলাকা হতে হবে জনবসতি থেকে দূরে এবং সুনির্দিষ্ট একটি দূরত্ব এক্ষেত্রে বজায় রাখতে হবে এবং আবাসস্থলে প্রতি রুমের সাথে সংযুক্ত শৌচাগার বা টয়লেট থাকতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত হলের খুব কম দূরত্বের মধ্যেই আশেপাশে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বসতি আছে এবং হলের রুমগুলোতে সংযুক্ত টয়লেট নেই যা এই নীতিমালার ব্যতিক্রম।

এতে শিক্ষক সমিতি আরো উল্লেখ করে, Lancet গবেষনাপত্রে গত ২০ মার্চ ইরান ও ইটালিতে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোয়ারান্টান সুবিধা তৈরিতে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা মেনে চলেনি এবং ইউভি (আল্ট্রাভায়োলেট রে) ও হট রুম সমৃদ্ধ নিয়মিত জীবাণুমুক্তকরন সুবিধা অনেক কোয়ারেন্টিন সেন্টার এ ছিলনা। এরকম সুবিধা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসেও নেই। তাই এটি কোন ভাবেই করোনা আক্রান্তদের জন্য উপযুক্ত আবাস নয়।

এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বায়সেফটি লেভেল -২+ (জিবনিরাপত্তা স্কেল ২ এর অধিক) waste management system বা বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনা নেই যা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন এ গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত রোগীদের কোয়ারান্টিনের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। এই ক্ষেত্রে সেই বর্জ্য নিশ্চিত ভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে যার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে জনবসতি শুন্য করা হয়েছে এই সংক্রমণের আক্রমন ঠেকাতে। সেই জায়াগায় আমাদের ক্যাম্পাসে এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া টা অত্যধিক ঝুঁকির।

শিক্ষক সমিতি মনে করে, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সরকারের এবং দেশের পাশে দরকার। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সংক্রমণের সংখ্যা না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দিতে পারে। আমরা মনে করি দেশের পাশে দাঁড়ানো যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন তেমনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার কথা চিন্তা করাটাও আমাদের নৈতিক ও পবিত্র দায়িত্ব।

এসব যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে চবির হলে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে শিক্ষক সমিতি।

এএইচ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!