ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দ্রুত গবেষণার প্রয়োজন – জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি

মশা ধ্বংসের ব্যাপারে সরকারি কার্যক্রম শুধুমাত্র মশা নিধনেই সীমাবদ্ধ। জীবিত মশা ওষুধ ছিটানোর পরেও মরেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য গবেষণার প্রয়োজন। ওষুধ ছিটানোর মধ্যে দিয়ে কেবল এডিস মশা ধমন করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, চট্টগ্রামের উদ্যোগে ‘এডিস মশা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা-গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিপিএ’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রফেসর নাসির উদ্দিন মাহমুদ, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রমুখ।

এডিস ইজিপ্টি মশার ওড়ার ক্ষমতা ১০০ গজ। ১০০ গজ করে বিশ্রাম নিয়ে উড়ে এডিস মশা ২ হাজার ২০০ মিটার উঁচু ভবনেও উঠতে পারে। তাই এডিস মশা মানুষের বাসা-বাড়িতে থাকতে পছন্দ করে। ঘরের অন্ধকার ও স্যাঁতসেঁতে জায়গা, শোবার ঘর, টয়লেট, আসবাবপত্রের নিচে, ভিতরে, ঝোলানো কাপড়, মশারির আড়াল ও দেয়ালে এবং অনেক সময় বাড়ির বাইরে ঘাস, গাছ ও লতাপাতায় এরা বিশ্রাম নেয়।এসব জায়গা ডিম পাড়ার উত্তম স্থান। ডিম থেকে লারভা বেরিয়ে আসে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পরেও লারভা থেকে যায় এবং ৬ মাস থেকে ১ বছর বেঁচে থাকে। নতুন পানি এলে আবার সেখানে এডিস মশার জন্ম হয়।

কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত জ্বর। যার কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় জ্বর হলেই ডেঙ্গুর টেস্ট করা দরকার। মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হবে না। মশাটি ডেঙ্গুবাহী হতে হবে। একজন ডেঙ্গু রোগীর উপসর্গ দেখা দেওয়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টা থেকে ৫ দিনের মধ্যে কামড়াতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মাত্রায় ভাইরাস ঢোকাতে হবে। ভাইরাসসমৃদ্ধ রক্ত মশার শরীরে ৮-১০ দিন থাকে। ভয়াবহ হলো, ডেঙ্গুবাহী মশা ডিম পাড়লে সব বংশধর ডেঙ্গুবাহক হবে।

সাংবাদিক সুভাষ দে বলেন, জীবন বাঁচানো প্রধান কর্তব্য। ১০ হাজারের বেশি রোগীকে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। দেশের সব ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। চট্টগ্রামে যে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তা কার্যকর কিনা! যদি অকার্যকর হয় তবে নতুন ওষুধ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সক্রিয় হতে হবে।

ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আজ সকালে ৪ জন রোগী ছিলেন। তারা বিপদমুক্ত। তবে ডেঙ্গু আসলেই ভয়াবহ। চমেকের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৬৪ আর রোগী ৩৬০ জন।এক শয্যায় ৪-৫ জন রোগী। মহামারী হলে সড়কে শামিয়ানা টাঙিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষার দরকার নেই। যদি উপসর্গ দেখা না যায়। ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায়, অফিসে মশা নিধন করতে হবে। ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের কারণে ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানান এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানিতেও ডেঙ্গু প্রজনন হওয়ার শঙ্কা আছে। ওই পানিতে ভবনের ক্ষতি না হয় এমন ওষুধ মেশানো যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। ডেঙ্গু রোগীর প্রধান চিকিৎসা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত, দেশের সব ডাক্তারদের হাতে-কলমে ১-২ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া। কমিটির পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, প্রশাসন ও জনগণকে নিয়ে সমন্বিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি করার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয় এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা উচিত।

এসআর/এএইচসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!