ফিঞ্চ-স্টার্কের আলোয় অন্ধকারে শ্রীলঙ্কা

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে

পথ চলতে চলতে হঠাৎ পথ হারানো পথিকের মতো অবস্থা হলো শ্রীলঙ্কার। উদ্বোধনী জুটিতে শ্রীলঙ্কার ভক্ত-সমর্থকদের বড় আশাই জাগিয়েছিলেন দুই ওপেনার দিমুথ করুনারাত্নে এবং কুশল পেরেরা। দ্বিতীয় উইকেটেও লাহিরু থিরিমান্নের সঙ্গে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন অধিনায়ক করুনারাত্নে। কিন্তু এরপর আর জয়ের কক্ষে থাকতে পারেনি তারা। অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে বেশিদূর যেতে পারেনি লঙ্কানরা। মিচেল স্টার্ক একাই ধ্বসিয়ে দেন শ্রীলঙ্কার মিডলঅর্ডার। অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৩৪ রানের জবাবে শেষপর্যন্ত ২৪৭ রানে অলআউট হয় চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দল।

ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ হারলেও টুর্নামেন্ট থেকে ফোকাস এতটুকু সরেনি তাদের। গত ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়েই সেটা জানান দিয়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। শনিবার অ্যারন ফিঞ্চের অধিনায়কোচিত দেড়শত রানে ভর করে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩৩৪ রানের পাহাড়ে চড়ে বসল অস্ট্রেলিয়া। সেই পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে শুরুতে আলো জ্বালিয়েছিল শ্রীলঙ্কাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পেরে সেই অন্ধকারেই ডুবল হাথুরুসিংহের দল। অজিদের কাছে ৮৭ রানে হার লঙ্কানদের।

ফিঞ্চ-স্টার্কের আলোয় অন্ধকারে শ্রীলঙ্কা 1
ব্যাট হাতে ১৫৩ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অসি অধিনায়ক ফিঞ্চ।

পাঁচ ম্যাচে অজিদের এটি চতুর্থ জয়। একমাত্র ভারতের কাছে হেরেছে তারা। অপরদিকে, পাঁচ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় হার। তাদের একমাত্র জয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। পাঁচ ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে এখন তালিকার শীর্ষে অজিরাই।

অথচ ৩৩৫ রানের টার্গেট সামনে রেখে কী দুর্দান্ত শুরুটাই না করে শ্রীলঙ্কা। ৫২ রান করে কুশল পেরেরা যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে রান ১১৫। তাও আবার ১৫.৩ ওভারে। স্কোর দেড়শ ছাড়ানোর পর ফেরেন লাহিরু থিরিমান্নে (১৬)। কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড় টপকানোর দিকে ছুটছিলেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে।

ফিঞ্চ-স্টার্কের আলোয় অন্ধকারে শ্রীলঙ্কা 2
লঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নে যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ আশায় ছিল লঙ্কানরা। তিনি আউট হয়ে যান ৯৭ রানে।

কিন্তু ৩০ রান করে মেন্ডিস ফিরতেই মড়ক লাগে লঙ্কান ব্যাটিং লাইনআপে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও থিসারা পেরেরাদের নড়বড়ে মানসিকতা দেখে অজিদের পেস ঝড়ে বাড়তি হাওয়া যোগ হয়। যে ঝড়ে একেবারে কুপোকাত ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ীদের ব্যাটসম্যানরা। তিন রানের আক্ষেপ নিয়ে করুনারত্নে ফিরতেই লড়াই থেমে যায় শ্রীলঙ্কার, ১০৮ বলে ৯৭ রানের ইনিংস তার। তাদের শেষের ব্যাটসম্যানরা অস্ট্রেলিয়ার জয় বিলম্ব করা ছাড়া বিশেষ কিছুই করতে পারেননি। ২৫ বাকি থাকতে ২৪৭ রানে অলাআউট হয় তারা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মিচেল স্টার্ক চারটি, কেন রিচার্ডসন তিনটি ও প্যাট কামিন্স দুটি উইকেট নেন। জেসন বেহরেনডোর্ফ নেন একটি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৭ (ওয়ার্নার ২৬, ফিঞ্চ ১৫৩, খাজা ১০, স্মিথ ৭৩, ম্যাক্সওয়েল ৪৬*, মার্শ ৩, কেয়ারি ৪, কামিন্স ০, স্টার্ক ৫*; মালিঙ্গা ১/৬১, উদানা ২/৫৭, ডি সিলভা ২/৪০)
শ্রীলঙ্কা: ৪৫.৫ ওভারে ২৪৭/১০ (করুনারত্নে ৯৭, কুসল পেরেরা ৫২, থিরিমান্নে ১৬, মেন্ডিস ৩০, ম্যাথুস ৯, সিরিবর্দনা ৩, থিসারা ৭, ডি সিলভা ১৬*, উদানা ৮, মালিঙ্গা ১, প্রদিপ ০; স্টার্ক ৪/৫৫, কামিন্স ২/৩৮, বেহরেনডর্ফ ১/৫৯, রিচার্ডসন ৩/৪৭)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮৭ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: অ্যারন ফিঞ্চ

গত দু’টি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যাওয়ায় মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। অবশেষে শনিবার লন্ডনে মাঠে নামার সুযোগ হয় লঙ্কান ক্রিকেটারদের। টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে আবহাওয়ার ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। কিন্তু বাস্তবে তা বুমেরাং হয়ে ফেরে।

ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ৮০ রান যোগ করেন অধিনায়ক ফিঞ্চ। গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ২৬ রানে ফিরে যাওয়ার পর দ্রুত ফেরেন উসমান খাজা (১০)। এরপর তৃতীয় উইকেটে প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গে ১৭৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে রানের পাহাড়ে ওঠার দিশা দেখান অ্যারন ফিঞ্চ।

ফিঞ্চ-স্টার্কের আলোয় অন্ধকারে শ্রীলঙ্কা 3
মিশেল স্টার্কের গতির কাছে হার মানতে বাধ্য হয় লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ৪ উইকেট শিকার করে এবারের আসরে ১৩ উইকেট নিয়ে সবার শীর্ষে উঠে এলেন স্টার্ক।

স্টিভ স্মিথের সঙ্গে জুটি বেঁধে শ্রীলঙ্কান বোলারদের বেদমহারে পিটিয়ে প্রথমে শতরান ও পরে দেড়শতরান পূর্ণ করেন ফিঞ্চ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ১৪তম শতরান। ৪২.৪ ওভারে ফিঞ্চ যখন আউট হন, দলের রান তখন ২৭৩। অজি দলনায়কের ১৫৩ রানের ইনিংস এদিন সাজানো ছিল ১৫টি চার ও ৫টি ছক্কায়। অধিনায়কের পাশাপাশি ৫৯ বলে ৭৩ রানের মূল্যবান ইনিংস আসে স্মিথের ব্যাট থেকে। ২৫ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের মারকুটে ইনিংস খেলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রানে শেষ করে অস্ট্রেলিয়া।

২টি করে উইকেট নেন ইসুরু উদানা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ১০ ওভারে ৮৮ রান খরচ করেন নুয়ান প্রদীপ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!