৯ নারীর চুরির ফাঁদ—আসেন পানের বাটা হাতে, করেন ভবনের মালামাল চুরি

দলে ওরা ৯ থেকে ১০ জন। সবাই নারী। টার্গেট নির্মাণাধীন ভবন। বিল্ডিংয়ের ভিতর কোথায় কি আছে, তা আগে থেকেই রেকি করে। রেকি করতে যাওয়ার সময় কেউ গন্তব্য জানতে চাইলে জানায়, তারা টাইলসের কাজ করার জন্য এসেছে। তাদের মধ্যে একজন সিঁড়ির নিচে থেকে পানের বাটা নিয়ে বসে থাকে। পান খায়। অন্য নারীরা উপরে উঠে যায়। উপরে উঠে বাড়ির বাথরুম, সিলিং চেক করে আসে।

এ সময় সাথে থাকা অন্য মহিলাদের সকলেই উপরে উঠে যায়। কেউ যদি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করে তাহলে তাকে দাঁড় করিয়ে খোশগল্প করতে থাকে যাতে সেই ব্যক্তি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠতে না পারে। এর ফাঁকে ওপরে ওঠা মহিলারা দ্বিতীয় তলায় ওঠে সুযোগ বুঝে বিল্ডিংয়ের তার (ক্যাবল), পাইপ ফিটিংসের মালামালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কৌশলে শাড়ির আড়ালে চুরি করে নিয়ে যায়। সুযোগ বুঝে চুরি শেষে তারা বিল্ডিং থেকে নেমে চলে যায়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ পরিকল্পনা ধোপে টেকেনি। ধরা পড়তে হয়েছে পুলিশের জালে। গত ১৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দুপুরে কোতোয়ালী থানা পুলিশ চোরচক্রের ৯ মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে। ১৪ এপ্রিল সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলো, রোকসানা বেগম (২৮), হেলেনা বেগম (২৮), শাহিনুর বেগম (২৫), পারভিন আক্তার (২৬), বিবি ফাতেমা (৩০), রেনু বেগম (৩০), মরিয়ম বেগম (৪৫), বিবি রহিমা (৩৫), পারভিন বেগম (২৮)। এরা সবাই নগরীর আকবরশাহ থানা ও হালিশহর ছোটপুলে পরিবারসহ বাস করেন।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন জানান, ব্যবসায়ী এনামুল হক প্রকাশ এনাম (৩৮) ও তার অংশীদারদের নিয়ে ফিরিঙ্গি বাজার এয়াকুব ৩৫/বি হোল্ডিং এ একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। প্রায় ২০ মাস যাবত ভবনটির এর নির্মাণ কাজ চলছে। বর্তমানে বিল্ডিং এর ৮ তলার কাজ চলমান। ভবনটির নির্মাণ কাজ করার জন্য আনা সকল মালামাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি স্টোর রুমে রাখা হত। নির্মাণাধীন হওয়ায় স্টোর রুমের অস্থায়ীভাবে করা দরজায় ছোট একটি তালা লাগিয়ে নির্মাণ সামগ্রী রাখা ছিল। ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু থেকে মো. সোহেল সিকিউরিটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভবনের নির্মাণ সামগ্রীর সাথে বিল্ডিং ওয়ারিং কাজ করার জন্য বাল্ডিল আকারে তার (ক্যাবল) রাখা ছিল, যার প্রতিটি বান্ডিলে অনুমান ১০ কেজি করে গোলাকারে বাঁধা অবস্থায় বিল্ডিং এর ২য় তলায় স্টোর রুমে রাখা ছিল।

সিকিউরিটি সোহেল মাঝে মাঝে ভবনের নির্মাণ কাজ তদারকি করে মালামাল সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে থাকতেন। গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় তিনি মালামাল গুণতে এসে ৩৩ বান্ডিল ইলেক্ট্রিক সার্ভিস লাইনের তার (ক্যাবল) কম পান। পরবর্তীতে নিরাপত্তা কর্মী ও নির্মাণ কাজে জড়িত কর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, স্টোর রুমের তালা খুব ছোট ও তা টান দিলে চাবি ছাড়া খুলে যায়। এটি দেখে তিনি স্টোর রুমে থাকা মালামালের নিরাপত্তার জন্য কিছু মালামাল নিচের তলায় নিরাপত্তা কর্মীদের অস্থায়ী রুমে রাখার ব্যবস্থা করেন।

এদিকে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও নিরাপত্তা কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, ৯ এপ্রিল ও ১২ এপ্রিল সকালে অপরিচিত কয়েক জন মহিলা ভবনে এসে তারা টাইলস এর কাজের জন্য এসেছে বলে জানায়। তারা বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন শ্রমিকদের সাথে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা থাকার পর নিরাপত্তা কর্মীরা অন্যত্র ব্যস্ত থাকার সুযোগে চলে যায়। বিষয়টি সন্দেহ হলে তিনি সকলের প্রতি নজর রেখে চুরি যাওয়া মালামাল সংক্রান্তে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন।

এরপর ১৩ এপ্রিল বেলা সাড়ে বারোটার মহিলা চোরের দল পুনরায় নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ে আসলে তাদের কৌশলে আটক করেন নিরাপত্তাকর্মী।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা নির্মাণাধীন ভবনের স্টোর রুম থেকে সার্ভিস তার (ক্যাবল) চুরি করার কথা স্বীকার করে। প্রাথমিকভাবে ২ লাখ ১০ হাজার টাকার তার চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। পরে পুলিশে খবর দিলে এসআই সুকান্ত চৌধুরী ও এ এসআই ইউসুফ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা তাদের নাম ঠিকানা, চুরির আদ্যোপান্ত পুলিশের কাছে স্বীকার করে। এ ঘটনায় এনামুল হক বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান ওসি নেজাম উদ্দিন।

আইএমই/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!