৮ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে কাস্টমসের চাকরিতে এসে দেখে পুরোটাই ভুয়া!

এক রোববারেই তিন তরুণের স্বপ্নভঙ্গ

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের জন্য ৮ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন লালমনিরহাটের মিলন চক্রবর্তী। ওই সময়েই তিনি পড়ে যান প্রতারকচক্রের খপ্পরে। চট্টগ্রামের একটি স্কুলে সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয় তার জন্য। সেই সাথে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ অফিসের পক্ষ থেকে পুলিশ ‘ভেরিফিকেশন’ এবং ডাক্তারি ‘পরীক্ষা’ও সম্পন্ন হয়। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে যোগদান করতে এসে দেখেন নিয়োগপত্রের পুরোটাই ভুয়া।

শুধু মিলন নন, রোববার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে ভুয়া যোগদানপত্র নিয়ে চাকরি করতে এসেছিলেন আরও দুই যুবক। তারাও একই কায়দায় প্রতারণার শিকার। জায়গা জমি বিক্রি করে আট লাখ টাকা প্রতারকের হাতে তুলে দেওয়ার পর চাকরি না পেয়ে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে এদের মাথায়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কথা হয় মিলন চক্রবর্তীর সাথে। লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা থানার নওদাবাস এলাকার পূর্ব বেজ গ্রামের কৃষ্ণকান্ত চক্রবর্তীর ছেলে তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মিলন জানান, আনোয়ারুল ইসলাম নামে এক প্রতারকের খপ্পরে পড়েন তিনি। চার মাস আগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে ওই প্রতারক জানায় ৮ লাখ টাকা দিলে তাকে কাস্টমসের চাকরি জোগাড় করে দিতে পারবে।

নিয়মকানুন পালনে ঘাটতি রাখেনি প্রতারকচক্র
নিয়মকানুন পালনে ঘাটতি রাখেনি প্রতারকচক্র

চাকরির আশায় দুই বিঘা জমি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা এবং ধার-দেনা করে আরও এক লাখ টাকা নিয়ে মোট ৮ লাখ টাকা তুলে দেয় প্রতারক আনোয়ারুল ইসলামের হাতে।

টাকা দেওয়ার পর চট্টগ্রামের একটি হাই স্কুলে ‘নিয়োগ পরীক্ষা’ নেওয়া হয়। যে কক্ষে পরীক্ষা নেওয়া হয় সেখানে আরও ১৫ থেকে ২০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন।

নিয়োগ পরীক্ষার পর লালমনিরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এসআই আব্দুল মালেক নামে একজন কর্মকর্তা তার বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন করেন এরপর লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে তার মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়।

২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলমের স্বাক্ষরিত একটি দুই পৃষ্ঠার নিয়োগপত্র দেওয়া হয় মিলনকে। সেখানে স্বাক্ষর এবং সিল দুটোই ভুয়া। আর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ডাক গ্রহণ ও প্রেরণ শাখা থেকে পাঠানো হয়েছে বলে দেখা যায়। সেখানে একটি ‘স্মারক নম্বর’ও উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্য সরকারি চাকরির মতোই এতো সব নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে দেখে মিলন চক্রবর্তী ভেবে নিয়েছিলেন তার চাকরিটা হয়েই গেল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে!

চাকরিতে যোগদানের জন্য গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) লালমনিরহাট থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান মিলন চক্রবর্তী। শনিবার চট্টগ্রামের ওয়ারলেস এলাকায় আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে দেখাও করেন মিলন। তখন আনোয়ার জানায়, সব কিছু ঠিকঠাক আছে রোববার কাস্টম হাউসে গেলেই সে যোগদান করতে পারবে।

রোববার সকালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার আকবর হোসেনের কার্যালয়ের সামনে এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকে মিলন। কার্যালয়ের সামনে থাকা নিরাপত্তাকর্মী রতন দাস তাকে জিজ্ঞেস করেন কেন এসেছে।

জবাবে চাকরির নিয়োগপত্র তাকে দেখাতেই রতন দাশ কাস্টম কমিশনারের স্বাক্ষর দেখেই বলেন এটি তো ভুয়া নিয়োগপত্র। আর তাতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মিলন চক্রবর্তীর।

কাস্টম কমিশনারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার কক্ষে আলাপকালে মিলন চক্রবর্তী জানান, রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্র তিনি। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। পড়ালেখার পাশাপাশি পুরোহিতের কাজ করে সংসার চালান।

মিলন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না। দুই বিঘা জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে আট লাখ টাকা তার হাতে তুলে দিই। বাবা-মা-স্ত্রী ও ছয় মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে জীবনটাই তছনছ হয়ে গেল।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!