৮ মাস ধরে বেতন নেই নোভো কার্গো সার্ভিসের কর্মীদের, মালিকরা ব্যস্ত বিলাসে

চট্টগ্রাম ও ঢাকাভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নোভো কার্গো সার্ভিস লিমিটেডের কর্মীরা আট মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। করোনার দোহাই দিয়ে কর্মীদের বেতন না দিয়ে রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর দিন পার করছেন ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। বকেয়া বেতন না পাওয়ার ভয়ে অনেকে চাকরিও ছাড়তে পারছেন না। আবার কেউ চাকরি ছাড়তে চাইলেও তাদেরকে নানাভাবে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এর মধ্যে থেমে নেই ওই প্রতিষ্ঠানে নতুন লোকবল নিয়োগ। চলছে পাঁচ তারকা হোটেলে অফিস মিটিংয়ের নামে বিলাসবহুল কারবার।

বেতন না পাওয়া কর্মীদের প্রশ্ন, করোনার কারণে যদি প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়ে, তাহলে নতুন কর্মী কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে? নতুন গাড়ি কিভাবে কেনা হচ্ছে?

কর্মীদের বেতন না দিলেও পাঁচ তারকা হোটেলে অফিস মিটিংয়ের নামে চলছে বিলাসবহুল কারবার।
কর্মীদের বেতন না দিলেও পাঁচ তারকা হোটেলে অফিস মিটিংয়ের নামে চলছে বিলাসবহুল কারবার।

তারা বলছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের ১৬ জুন। ২১ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আট মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। জুলাই শেষ হলে সেটা নয় মাসে দাঁড়াবে। বেতন চাইলে প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হচ্ছে, করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আর্থিক মন্দায় রয়েছে নোভো কার্গো। যার কারণে এমন হচ্ছে। অথচ ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে ১১টি কাভার্ড ভ্যান কিনেছে প্রতিষ্ঠান। বেতন না দিয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে।

এছাড়া করোনার সময় প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হয়েছে। করোনার সময় মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। তখন পণ্য কেনা থেকে শুরু করে অনলাইননির্ভর ছিল মানুষের দৈনন্দিন জীবন। যার কারণে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে করোনাকালীন সময়ে ভালো ব্যবসা করেছে প্রতিষ্ঠান। তবুও ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী বলেন, নতুন লোক নেওয়া থেমে নেই। ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। কিন্তু বেতন দেওয়া হচ্ছে না। করোনার শুরু থেকেই এভাবে আমাদের বেতন আটকে রাখা হচ্ছে। কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। এর আগে শ্রমিকরা বেতন না পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানের মূল গেইটে তালা দিয়েছিল। আন্দোলনের ভয়ে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, যারা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে বেতন নেন তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি বেতন না দিয়ে আইএসও (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ গুণগত মান নির্ণয়কারী আন্তর্জাতিক সংস্থা) সার্টিফেকেট নিতে কর্মীদের কাছে নতুন করে বায়োডাটার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এছাড়া নতুন নতুন নিয়ম করে চাকরিজীবীদের কোনঠাসা করে রাখা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মধ্যে একজন মহিলা কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দিলে তার বকেয়া বেতন প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী চাকরি ছাড়ার তিন মাসের মধ্যে কর্মকর্তার যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করার কথা।

এবিষয়ে জানতে নোভো কার্গো সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারাবিশ্বে করোনার আর্থিক মন্দা যাচ্ছে। আমাদেরও একই অবস্থা। যার কারণে কর্মীদের বেতন দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে।’

নয় মাস বেতন না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এতো মাস বেতন না দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। হয়তো এক দুই মাসের বকেয়া থাকতে পারে। বেতন দেয়নি বলে যারা আপনার (প্রতিবেদক) কাছে গেছে তাদেরকে আমার কাছে আসতে বলেন।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে আমাদের কথা বলার নিয়ম নেই। এরপরও বেতন না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি মানবিকভাবে দেখবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!