৮৫০ কোটি টাকার অপেক্ষায় চট্টগ্রামের নতুন আবাসন প্রকল্প ‘অনন্যা-২’

ঋণ পেতে সরকারের গ্যারান্টির আশায় সিডিএ

বিভিন্ন ব্যাংকে ৭৪০ কোটি টাকা আমানত জমা আছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। সেই টাকা খরচ না করে ‘লাভজনক হবে’— এমন আশা দেখিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে একটি আবাসন প্রকল্প নির্মাণের জন্য ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ পেতে সরকারের গ্যারান্টি চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে সিডিএ। এই ঋণের টাকার ওপরই ঝুলে আছে সিডিএর পরবর্তী প্রকল্প— অনন্যা আবাসন প্রকল্প-২। এই প্রকল্পে প্রতি কাঠা ভূমির মূল্য ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে সিডিএ কর্মকর্তারা এর আগে আভাস দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, সিডিএর কাছ থেকে এই আবেদন পাওয়ার পরই বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা সিডিএর ৭৪০ কোটি টাকা আমানত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কারণ সরকারি কোনো সংস্থার কাছে ঋণের টাকার ৮৭ শতাংশ অর্থ আমানত হিসেবে থাকলে সেই ঋণের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির দরকার হয় না।

সিডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, এক যুগেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রামে দুই হাজার প্লট নির্মাণের জন্য অনন্যা আবাসন প্রকল্প-২ হাতে নেয় সিডিএ। এই আবাসন প্রকল্পে ৮৫০ কোটি টাকার ঋণ দরকার। এ ঋণের জন্য সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগও করে সিডিএ। তবে সোনালী ব্যাংক ঋণের বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গ্যারান্টি অথবা স্থাবর বন্ধক রাখার প্রস্তাব দেয়।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জিজ্ঞাসার মুখে সিডিএ বলছে, ওই আমানতের মধ্যে ১৪০ কোটি টাকাই শুধু সিডিএর নিজের। বাকি টাকা সিডিএর বাস্তবায়িত ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া তহবিল। যা গত বছর ৩০ জুনের মধ্যে ঠিকাদারদের বিল ও পরিচালন ব্যয়বাবদ পরিশোধ করা হয়। তবে করোনা মহামারীর কারণে এ বিল তুলতে দেরি হচ্ছে।

তবে এটিই শুধু নয়, আরও বেশ কিছু আপত্তি তুলে ধরে সিডিএর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে ওইসব আপত্তির বিপরীতে সিডিএর জবাব তুলে ধরে ঋণের গ্যারান্টি দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আবার অনুরোধ জানানো হয়।

চট্টগ্রাম নগরীতে সিডিএর প্রস্তাবিত আবাসন প্রকল্প সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ ধরনের প্রকল্প আয়বর্ধক ও প্রচুর নগদ প্রবাহ থাকবে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট বিক্রি করে প্রকল্পের ব্যয় উঠে আসবে। সুতরাং এ ধরনের প্রকল্পে ঋণের জন্য তৃতীয় পক্ষের কোনো গ্যারান্টির দরকার পড়ে না।

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, সিডিএর এ ধরনের আবাসন প্রকল্পের প্লট সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য নয়। কিন্তু সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছাড়া গ্যারান্টি দেয় না।

এর জবাবে সিডিএ জানিয়েছে, অনন্যা আবাসন প্রকল্প-২-এর স্টেকহোল্ডার মধ্য ও উচ্চবিত্ত হলেও প্রকল্পের ভৌতকাজ শেষ করার জন্য ২০ হাজার শ্রমিক তিন বছর ধরে কাজ করতে পারবে। দুই হাজার প্লটে আগামী ১০-১৫ বছরে দুই হাজার ভবন নির্মাণ হবে। দুই লাখ শ্রমিকের সরাসরি এবং ১০ লাখ শ্রমিকের পরোক্ষ কাজ থাকবে। এই প্লটগুলোর ১ শতাংশ বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে সমাজের সব স্তরের মানুষ সুবিধাভোগী হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে অক্সিজেন কুয়াইশ সংযোগ সড়কের পাশে অনন্যা আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করে এক হাজারেরও বেশি প্লট বরাদ্দ দেয় সিডিএ। এরপর বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি আবাসিক প্রকল্প গ্রহণের ব্যাপারে আলোচনা হলেও কোনোটি আলোর মুখ দেখেনি। আবদুচ সালাম টানা ১০ বছর সিডিএর চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়েই মূলত তার অনীহায় কোন আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি।

অনন্যা-২ আবাসিক প্রকল্পটি ২০১৬ সালেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি একনেক সভায় ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। নগরীর পাঁচলাইশ, কুয়াইশ ও বাথুয়া মৌজার ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ভূমিমূল্য বিবেচনায় হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া ও শিকারপুর মৌজার ভূমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে শুরুতে প্রকল্প এলাকা ৪১৮.৭৩ একর থাকলেও বর্তমানে তা কমে ২৭৬ একর নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৭৬ একর এলাকার ৪০ শতাংশ ভূমি রাস্তা, লেক, খেলার মাঠ এবং সবুজায়নসহ নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক কাজে ব্যবহার করা হবে। বাকি ৬০ শতাংশ ভূমির উপর বিভিন্ন সাইজের ২ হাজার আবাসিক প্লট এবং ২০টি বড় সাইজের কমার্শিয়াল প্লট করে ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!