৮৩ বছরে এসে থামলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ

৮৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮ টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই স্টেডিয়ামেই স্যার ফজলে হাসান আবেদের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজার পর ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে। বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। সামাজিক উন্নয়নে তার অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুবুল হক পুরস্কার এবং গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার এবং শিক্ষাক্ষেত্রের নোবেল বলে খ্যাত ইয়াইদান পুরস্কার লাভ করেন। দারিদ্র বিমোচন এবং দরিদ্রের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুডে ভূষিত করে।

১৯৭০ সালে ফজলে হাসান আবেদ বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে ত্রাণ কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেল অয়েল কোম্পানির হেড অব ফাইন্যান্সের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্র্যাকের জন্ম। যুদ্ধের পর সিলেটের শাল্লায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাসরত লোকজনকে দেখতে গেলেন। সেখানে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি শাল্লায় কাজ করবেন। এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের দরিদ্র, অসহায়, সবহারানো মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসনকল্পে শুরু করলেন ‘Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee’ সংক্ষেপে যা ‘BRAC’ নামে পরিচিত।

১৯৭৩ সালে সাময়িক ত্রাণকার্যক্রমের গণ্ডি পেরিয়ে ব্র্যাক যখন উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে, তখন ‘BRAC’-এই শব্দসংক্ষেপটির যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়, সেটি হল ‘Bangladesh Rural Advancement Committee’। বর্তমানে ব্যাখ্যামূলক কোনো শব্দসমষ্টির অপেক্ষা না রেখে এই সংস্থা শুধুই ‘BRAC’ নামে পরিচিত। কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ— এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হল। বোর্ড ফজলে হাসান আবেদকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে

কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলেন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এর পর থেকে ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। গত আগস্টে তিনি ব্র্যাক বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন পদ থেকে অবসরে গিয়ে চেয়ার এমেরিটাস পদে স্থলাভিষিক্ত হন। এর পর থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও পলিসি বিশেষজ্ঞ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক যথাক্রমে ব্র্যাক এবং ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!