৭৯৫ কোটি টাকার লাইনে বিদ্যুৎ যাবে মাতারবাড়ি থেকে মদুনাঘাট

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় নির্মাণাধীন ১২০০ মেগাওয়াট মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ চলছে। ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল সার্কিট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হতে পারে, সেজন্য উচ্চতর প্রযুক্তির তার ও কন্ডাক্টর বসানো হবে।

বিদ্যুতের সুষম সঞ্চালনের লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাউজান উপজেলায় বসানো হচ্ছে ৩৫০টি টাওয়ার। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত সময় দেওয়া হয়েছে ৩০ মাস।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করছে প্রাক্কলিত সময়ের আগেই দুই বছরে কাজ শেষ করা হবে। এ বিদ্যুৎ সঞ্চালন নির্মাণ বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে সিস্টেম লস কমবে।

সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের অধীনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

৭৯৫ কোটি টাকার লাইনে বিদ্যুৎ যাবে মাতারবাড়ি থেকে মদুনাঘাট 1

ওই প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে আছেন ভরত রাজ। ৮ ফেব্রুয়ারি পিজিবির পক্ষে কোম্পানি সচিব মো. আশরাফ হোসেন এবং কেইসি ইন্টারন্যাশানালের পক্ষে হেড ও মহাব্যবস্থাপক কুলদীপ কুমার সিনহা প্রকল্প চুক্তিতে সই করেন।

প্রকল্পে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন জাপানি প্রতিষ্ঠান নিপ্পন ফোয়ে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের বৃহৎ মেট্রোরেল প্রকল্পেও উপদেষ্টা হিসেবে আছে। বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালন কাজে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্পের তথ্যমতে, মাতারবাড়ি আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার পাওয়ার প্রকল্প-২ নামে মাতারবাড়ি, পেকুয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, শিকলবাহা, মদুনাঘাট পর্যন্ত গ্রিড সাবস্টেশনে জাপানের হিটাচি করপোরেশন ৫০০ থেকে ৭৫০ এমভিএ ক্ষমতার তিনটি ট্রান্সফরমার স্থাপন করবে। এছাড়া ৪০০ কেভি ক্ষমতার ৬টি বে, দুইটি বাস কাপলার, দুইটি সেকশন এবং দুইটি বাস বিটি স্থাপন করা হবে। ২৩০ কেভি অংশেও একই সংখ্যক যন্ত্রাংশ থাকবে। পিজিসিবির গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেংথদেনিং প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

কেইসি ইন্টারন্যাশানালের প্রজেক্ট ম্যানেজার ভরত রাজ বলেন, ‘এ ধরনের লাইন নির্মাণ কাজে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিকূল পরিবেশ, বিপর্যস্ত রাস্তাঘাট, লবণাক্ত মাঠ, কদমাক্ত খালসহ বিবিধ কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময় কাজ করা সম্ভব নয়। তারপরও আমাদের প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা, পর্যাপ্ত লোকবল, বিপুল পরিমাণ যান্ত্রিক অবকাঠামো থাকার কারণে আমরা প্রকল্পটি প্রাক্কলিত সময়ের ৬ মাস আগে ২৪ মাসে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যুৎখাত আরও একদাপ এগিয়ে যাবে।’

প্রকল্পের প্রকৌশলী নন্দ দুলাল সরকার বলেন, ‘সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ঋতুভিত্তিক সহনীয় ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারের নির্ভরতায় কাজের গুণগতমান রক্ষায় আমরা পারদর্শী।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ঠিকমত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!