৬ শিক্ষার্থ‌ীর ফল আটকে গেল অধ্যক্ষের ‘ষড়যন্ত্রে’

অধ্যক্ষ দোষ দিচ্ছেন শিক্ষা কর্মকর্তাকে

সব শিক্ষার্থীর মতোই ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তানজিম, ইকবাল হোসেন সোহেল, ইকরামুল হক, ফারিহা ইয়াসমিন, ইউনুস ও ফরহাদ। অন্য শিক্ষার্থীদের মতো তাদেরও স্বপ্ন ছিল ভালো ফলাফল করে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার। এ জন্য অপেক্ষা করছিলেন ফলাফলের। কিন্তু গত ৩১ মে ফলাফল প্রকাশিত হলে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ৬ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে ফলাফল দেখতে গিয়ে দেখে তাদের সবার ফল স্থগিত। মুহূর্তে সবার আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। এমন ঘটনাই ঘটেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া মজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসায়।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ আইয়ুব নাসেরের ‘সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের’ কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

পরে তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অধ্যক্ষ আইয়ুব নাসের তাদের সহানুভূতি না দেখিয়ে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে তাদের ফলাফল আনতে হবে বলে উল্টো ৬ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে দাবি করেন। পরে তারা কোনো উপায় না দেখে অধ্যক্ষকে ২ হাজার টাকা করে দিতে বাধ্য হয়। অধ্যক্ষ তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর লকডাউনের দোহাই দিয়ে আর তাদের ফলাফল আনতে যাননি। অধ্যক্ষের অবহেলার কারণে ওই শিক্ষার্থীদের পুনঃনিরীক্ষণের সময়ও চলে যায়।

ফলে নিরুপায় হয়ে ৬ শিক্ষার্থী গত ১৮ জুন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাতকানিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর (ফলাফলের বিষয়ে) একটি লিখিত আবেদন করেন।

এছাড়া সোনাকানিয়া মজিদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ফারিহা ইয়াসমিন গত ২৩ জুন মাদ্রাসা বোর্ডেও একটি লিখিত আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা বোর্ড সাতকানিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে রেজাল্ট স্থগিত এবং বোর্ডে পরীক্ষার্থীদের খাতা কেন জমা হয়নি— সে বিষয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু ওই সময় পেরিয়ে গেলেও শিক্ষা কর্মকর্তা আজিম শরীফ এ ব্যাপারে বিস্ময়কর নীরবতা পালন করেন বলে অভিযোগ করেন ফারিহা ইয়াসমিন।

এ বিষয়ে সোনাকানিয়া মজিদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আইয়ুব নাসের বলেন, ‘আমি টাকা খেলেও তাদের রেজাল্টের বিষয়ে বোর্ডে চিঠি লিখেছি। বাকিটা আমি আর কিছু জানি না। খাতাগুলো কি হারিয়ে গেল, নাকি কেউ চুরি করলো? এগুলোর ভালো জবাব দিতে পারবেন কেন্দ্রসচিব (উপজেলা শিক্ষা অফিসার) আজিম শরীফ।’

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আহসান সাঈদ বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের খাতা হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটার একটা সমাধান হতেই হবে। বিষয়টা আমি সিরিয়াসলি নিয়েছি। খাতাগুলো গোপন করা কোনরকম ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা মাদ্রাসা বোর্ড শীঘ্রই একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে এটার সমাধান করবে।’

এ বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে সাতকানিয়া সাংসদ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী বলেন, ‘বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। এটার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলতে দেওয়া যায় না। এটা নিয়ে সম্প্রতি আমি নিজেও তদন্ত শুরু করেছি।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!