৬৫ দিনের শৃঙ্খল শেষে সাগরপাড়ে আনন্দের ঢেউ

২২ জুলাই দুপুর দুইটা। তপ্ত রোদে গায়ের টি-শার্ট মাথায় বেঁধে বেলাল উদ্দিন রুটি রুজির অবলম্বন জালটি শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছে কোন ছেঁড়া আছে কিনা। একটি কাঠি দিয়ে মেপে নির্দিষ্ট দূরত্বে সেলাই দিচ্ছেন। এভাবে তাদের ২২ জনের সবাই জালের কোন না কোন কাজ করছেন। শুধু বেলালরা নয়, জুয়েল, এনামুল হক, শাহাদাত হোসেনরা যার যার জাল নিয়ে ব্যস্ত। আজ মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন শেষ হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে শেষ হচ্ছে তাদের প্রতীক্ষারও। টানা দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলে পরিবারগুলোতে ফিরেছে স্বস্তি। সাগরপাড়ে এখন সাজ সাজ রব।

মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৬৫ দিন মাছ ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ। সমুদ্রের মৎস্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার নিয়ম চালু করেছে সরকার। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের ওপর থাকলেও এ বছর ২৫ হাজার ট্রলার এবং নৌকাকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যজীবীরা বিক্ষোভ করেছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সরকারও তা আমলে নিয়ে ৬৫ দিনে তাদের বেকারত্বের বিপরীতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে।

২২ জনের সবাই জালের কোন না কোন কাজ করছেন।
২২ জনের সবাই জালের কোন না কোন কাজ করছেন।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আবুল হাসনাত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সমুদ্র বিজয়ের পর ব্লু ইকোনোমির যে অপার সম্ভাবনা আমাদের সামনে রয়েছে তা নিশ্চিত করতে সরকার নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ও ক্রাস্টাসিয়ান্স’র (কঠিন আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী, কাঁকড়া) নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি মাছের মজুদ সংরক্ষণ, সুষ্ঠু ও সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করার লক্ষে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৬৫ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা পালন করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৬ মেট্রিকটন এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬২৭ মেট্রিকটন মাছ আহরণ হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ সালের হিসাব এখনো শেষ হয়নি। তবে তিনি মৎস্য আহরণ বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সুফল তো মৎস্য শিকারিরা পাচ্ছেন, আগামীতে সেটি আরো বৃদ্ধি পাবে।

নগরীর ফিশারীঘাটে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৃত মৎস্য শিকারীদের বিশাল একটি অংশ ‘জেলে’ পরিচয়পত্র পাননি। কারণ তারা বেশিরভাগ সময় নিজ জেলার বাইরে থাকেন। নোয়াখালীর চর আলেকজান্ডারের বাসিন্দা এনামুল হক জানান, এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার তার কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করেছিল ‘জেলে’ পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে দিতে। এনাম টাকা দিতে না পারায় তার পরিচয়পত্র হয়নি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মান্য করায় সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে তিনিও বঞ্চিত তার সাথে অনেকেই।

তাদের সবারই একই অভিযোগ, অনেকেই এলাকা থেকে জেলে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম এসে অন্য পেশায় আছে। আবার কেউ কেউ নিজ এলাকায় অন্য পেশায় আছেন। কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধা ঠিকই তারা ভোগ করেন জেলে পরিচয়ে।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোমিনুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, অন্য জেলার অধিবাসী হয়েও চট্টগ্রামে মাছ শিকার করেন তাদের অনেকের পরিচয়পত্র নেই। স্ব স্ব জেলার মৎস্য কর্মকর্তা পরিচয়পত্র ইস্যু করেন। তবে শর্ত হচ্ছে তাকে ওই এলাকার স্থায়ী অধিবাসী হতে হবে। নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল বা অন্য জেলার অধিবাসীদের পরিচয়পত্র ইস্যু করার আইনি সুযোগ আমার হাতে নেই।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!