৬০ পয়সার ওষুধই কাজ দিচ্ছে দেশের করোনা চিকিৎসায়

ওষুধটি মুখে খাওয়া যায়। দাম প্রতিটি সর্বনিম্ন ৬০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ১৫ পয়সা পর্যন্ত। ইনজেকশনের দামও নগণ্যই— সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। দেশের অন্তত ৩০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওষুধটি তৈরি করে আসছে বহু বছর ধরে। ওষুধটির জেনেরিক নাম ডেক্সামেথাসন।

বাংলাদেশে সস্তা এই ওষুধটিই এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় হয়ে উঠেছে রীতিমতো মহৌষধ। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এই ওষুধটির ব্যবহার হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ওষুধটি ব্যবহারে ফলও পাওয়া যাচ্ছে ভালোই। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও করোনা চিকিৎসায় ডেক্সোমেথাসন গোত্রভুক্ত মেথিলপ্রেডনিসোলন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সেখানকার একজন চিকিৎসক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন।

দেশে অনেকদিন ধরেই ডেক্সামেথাসন গোত্রভুক্ত ওষুধ ওরাডেক্সন ও মিথাইল প্রেডনিসোলোনের প্রয়োগ হয়ে আসছে করোনা চিকিৎসায়। ওষুধটি মূলত ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়— এমন করোনা রোগীদেরই বেশি কাজে লাগে।

অবশ্য ডেক্সামেথাসন নামের ওই ওষুধ প্রয়োগের কথা বলা আছে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রণীত জাতীয় নির্দেশিকায়ও।

এদিকে মঙ্গলবার (১৬ জুন) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি ৮ জন ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীর মধ্যে এই ওষুধের সাহায্যে একজনের প্রাণরক্ষা করা সম্ভব। তাদের মতে, সঙ্কটজনক করোনা আক্রান্তদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে সফল হয়েছে ডেক্সামেথাসন নামে এই স্টেরয়েড।

স্টেরয়েডটি এই রোগীদের খাওয়ানো অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগের পরে দেখা গিয়েছে, তার জেরে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নেওয়া রোগীদের ৩৫% এর মধ্যে মৃত্যুর আশঙ্কা কমেছে। যে সমস্ত রোগীদের অক্সিজেন দিতে হচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে মৃত্যুর আশঙ্কা ২০% কমেছে। তবে মনে করা হচ্ছে, আশঙ্কাজনক রোগী ছাড়া এই ওষুধ ফলদায়ী নয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অনুমান করছেন ব্রিটেনে যখন করোনা মহামারি শুরু হয়েছে তার প্রথম থেকেই যদি এই ওষুধ ব্যবহার করা সম্ভব হতো তাহলে পাঁচ হাজার পর্যন্ত জীবন বাঁচানো যেত। কারণ এই ওষুধ সস্তা।

অন্যদিকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই স্বল্পমাত্রার স্টেরয়েড চিকিৎসা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই ওষুধ ব্যবহার করলে ভেন্টিলেটারে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ কমানো যাবে। আর যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার এক পঞ্চমাংশ কমানো যাবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!