৬০০০ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার এক অসমাপ্ত কাহিনী

ইউনিপে টু ইউ

চট্টগ্রাম রেলওয়ের এক কর্মকর্তা তার সারাজীবনের সঞ্চয় ২১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন ইউনিপে টু ইউতে। ২০১১ সালে যখন এই প্রতারক কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন এই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন— ‘ইউনিপেতে আমার ২১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে আমি এ বিনিয়োগ করেছি। ইউনিপে টু বন্ধ হয়ে গেলে আমি পথে বসে যাব। আমি আত্মহত্যা করব।’

৬ লাখ বিনিয়োগকারীকে ১০ মাসে বিনিয়োগ করা টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়েছিল মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ইউনিপে টু ইউ। অসহায় বিনিয়োগকারীরা এই লোভে মাত্র ১৩ মাসে ছয় হাজার কোটি টাকা সরল বিশ্বাসে তুলে দিয়েছিল ওই এমএলএম কোম্পানির হাতে। এসব বিনিয়োগকারীকে ইউনিপে টু ইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ওই টাকা বিদেশে স্বর্ণব্যবসায় বিনিয়োগ করা হবে। সেখান থেকে প্রতি ১০ মাসে ওই টাকা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

মূলত স্বর্ণে বিনিয়োগ করে লোভনীয় মুনাফার কথা বলে অল্প সময়ে তারা বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে। প্রতারণার লক্ষ্যে গ্রাহককে স্বর্ণ না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ বারের মালিকানা সংবলিত সার্টিফিকেট দেয়। এ বিনিয়োগের বিপরীতে ছয় মাসে সর্বোচ্চ ১৫০ শতাংশ এবং ১০ মাসে ২৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়ার লোভ দেখানো হতো। অথচ ওই সময়ে দেশের কোনো ব্যাংকে টাকা রাখলে গ্রাহকরা বার্ষিক ভিত্তিতে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদ পেতেন।

ইউনিপে টু ইউতে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষগুলো টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য কম চেষ্টা করেননি। তবে হতাশই হতে হয়েছে গত নয় বছর ধরে।
ইউনিপে টু ইউতে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষগুলো টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য কম চেষ্টা করেননি। তবে হতাশই হতে হয়েছে গত নয় বছর ধরে।

এমন প্রলোভনে চট্টগ্রামের শিমুল বিশ্বাস যেমন তার সারাজীবনের সঞ্চয়ের সব টাকা ইউনিপে টু ইউর হাতে তুলে দিয়েছেন, তেমনি ঢাকার মনজুর হোসেন নিজের জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি ছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোম্পানিতে তিন কোটি টাকা তুলে দেন ওই এমএলএম কোম্পানির হাতে।

অন্য সবার মতো শুরুতে তারাও কোম্পানিতে একটি অনলাইন একাউন্ট খোলেন এবং একজন এজেন্টের মাধ্যমে টাকা জমা করেন। বিনিময়ে কাগজের একটি রসিদ দেওয়া হয় তাদের। যখনই তারা তাদের বিনিয়োগ করা টাকার অবস্থা দেখতে অনলাইন একাউন্টে লগ অন করতেন, সেই অ্যাকাউন্টে দেখতে পেতেন টাকার অংক দিন দিন ‘বাড়ছে’।

ইউনিপেকে টাকা দেওয়া অনেক বিনিয়োগকারী এমনও দেখতে পান যে, তাদের অনলাইন একাউন্টের ব্যালেন্স দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তবে এই অংক শুধুমাত্র কম্পিউটারের পর্দাতেই দেখা যেতো। বাস্তবে কোনো বিনিয়োগকারীই এই টাকার নাগাল পেতেন না।

এভাবে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বেকার তরুণ-তরুণী থেকে ছোট ব্যবসায়ীরাও এই কোম্পানির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

গত বছরের জানুয়ারিতে ইউনিপে টু ইউর এমডিসহ ছয়জনকে ১২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
গত বছরের জানুয়ারিতে ইউনিপে টু ইউর এমডিসহ ছয়জনকে ১২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

বছরের পর বছর এমন নজিরবিহীন প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইউনিপে টু ইউর বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০১৯ সালে এই মামলায় রায় দেন আদালত। রায়ে আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইউনিপে টু ইউতে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু রায় দেওয়ার ২১ মাস পার হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের কাছে এখনও টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতারিত গ্রাহকরা কয়েক মাস ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনো আশ্বাসও মিলছে না।

যেভাবে মানুষকে ধোঁকা দিতো ইউনিপে টু ইউ

কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত ইউনিপে টু ইউ ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু মামলার আগেই কোম্পানিটি তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

এর আগ পর্যন্ত ইউনিপে টু ইউ প্রায় ১৩ মাস ধরে তাদের ‘জালিয়াতি অপারেশন’ চালাতে সক্ষম হয়। এই অল্প সময়েই কোম্পানিটি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে ফেলে। কেউ এমএলএম পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হতো, এমএলএম পদ্ধতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি পুরোটাই বানোয়াট।

ইউনিপে টু ইউ-তে বিনিয়োগে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তিকে প্রথমে কোম্পানির ওয়েবসাইটে ফেরতযোগ্য ৪২ হাজার টাকা দিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হতো। চাইলে প্রতিবার এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে যে কেউ আনলিমিটেড একাউন্ট খুলতে পারতো। তারা ‘নিয়ম’ করে দিয়েছিল একটি অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ এক কোটি ২৬ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। কিন্তু দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীদের অনেকেই একাধিক একাউন্ট খুলেছেন। এমন উদাহরণও আছে, অনেকে ১০০টিরও বেশি একাউন্ট খুলেছেন।

সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ চার মহানগরে ইউনিপে টু ইউ কয়েক হাজার এজেন্ট নিয়োগ করে। এই এজেন্টরা তাদের সংগৃহীত বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর কমিশন পেয়েছেন।

মামলা এবং রায়

ইউনিপে টু ইউর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত পরিচালনার পর ২০১১ সালে দুদক কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ইউনিপে টু ইউ কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। অন্যদিকে দেশের ভেতরে আছে আড়াই হাজার কোটি টাকা।

২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি অর্থপাচার মামলায় ইউনিপে টু ইউর চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ছয় কর্মকর্তাকে ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। দণ্ডিত আসামিরা হলেন ইউনিপে টু ইউর চেয়ারম্যান মো. শহিদুজ্জামান শাহীন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মুনতাসির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক মাসুদুর রহমান, ব্যবস্থাপক আ ম জামশেদ রহমান, উপদেষ্টা মঞ্জুরুল এহসান চৌধুরী এবং পরিচালক এইচ এম আরশাদ উল্লাহ। এদের মধ্যে শহিদুজ্জামান শাহীন, মাসুদুর রহমান ও মঞ্জুরুল এহসান চৌধুরী বিদেশে পলাতক রয়েছেন।

আদালত তাদের ২ হাজার ৭০২ কোটি ৪১ লাখ ১১ হাজার ৭৮৪ টাকা জরিমানাও করেন। একইসঙ্গে দোষীদের অ্যাকাউন্ট এবং ইউনিপে টু ইউর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি প্রতারিত বিনিয়োগকারীদের কাছে এই টাকা ফেরত দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

তবে এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতারিত বিনিয়োগকারীদের কেউই এখনও কোনো টাকা ফেরত পাননি। সরকার টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে— এমন কোনো লক্ষণও নেই।

ঢাকার বাসিন্দা এক ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারী মনজুর হোসেন চলতি বছরের আগস্টে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ২৬ আগস্ট রিটের প্রাথমিক শুনানির সময় উত্তরদাতাদের চার সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেন— কেন ইউনিপে টু ইউ দ্বারা বাজেয়াপ্ত করা টাকা গ্রাহকদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়নি?

তবে নির্দিষ্ট ওই সময়ের চেয়ে আরও এক মাস পেরিয়ে গেলেও অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক— কোনো উত্তরদাতার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

আরও মামলা, চট্টগ্রামে একটির বিচার

২০১৮ সালের শুরুতে ইউনিপে টু ইউর ৩৬৫ জন গ্রাহক ২৭১ কোটি টাকা বিনিয়োগ ফেরত পেতে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ (সালিশি) আদালতে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। দুটি মামলার একটির বিচারও এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। ইউনিপে টু ইউ কর্মকর্তারা ছাড়াও অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে এসব মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। অভিযুক্তদের কেউই এখনও আদালতে হাজিরও হননি।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় ইউনিপে টু ইউ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরও ৭০টি জালিয়াতির মামলা রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে দায়ের করা একটিমাত্র মামলার বিচার করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের ওই বাদীও কোনো টাকা ফেরত পায়নি।

২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে ইউনিপে টু ইউর দুই পরিচালককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। চট্টগ্রামে ইউনিপের বিরুদ্ধে কোনো মামলায় এটিই ছিল প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র রায়। এই দুজন হলেন শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও আইয়ুব আলী। আইয়ুবকে ধরা গেলেও শাহাদাত পলাতক রয়েছেন।

ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় ইউনি পে টু ইউর কার্যালয় খুলে আসামিরা লভ্যাংশ দেওয়ার লাভের কথা বলে বাদী মো. ইয়াছিনের কাছ থেকে তিন লাখ ৪৬ হাজার টাকা নেন। কিন্তু তারা বাদীকে কোনো লভ্যাংশ দেননি। উল্টো বিনিয়োগের টাকাও ফেরত দেননি। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১৭ জুন মামলা করা হলে তদন্ত শেষে পুলিশ তিন পরিচালক শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, আইয়ুব আলী ও নাঈমা জান্নাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালত এ রায় দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নাঈমাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

২০১২ সালে ঢাকার ৩৫ জন বিনিয়োগকারী মোহাম্মদপুর থানায় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এখনও আদালতে সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

তিন বসের ৯ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করা শেষ?

দোষী সাব্যস্ত ছয়জন শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যে তিনজন— ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুনতাসির হোসেন, ম্যানেজার এএম জামশেদ রহমান এবং পরিচালক এইচএম আরশাদ উল্লাহ ২০১১ সাল থেকে কারাগারে রয়েছেন। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রেফতারের পর থেকে তারা ইতিমধ্যে ১২ বছর কারাদণ্ডের মধ্যে নয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করে ফেলেছেন। এখন তাদের আর সর্বোচ্চ ২-৩ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

তবে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন বলেন, সাজা শেষ হলেও দোষীদের মুক্তি দেওয়া হবে না। যদি তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দুই হাজার ৭০২ কোটি টাকা জরিমানা জমা না দেয়, তাহলে তাদের জেলেই থাকতে হবে। তিনি জানান, কমপক্ষে অর্ধেক টাকা জমা করে মুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে তাদের।

অন্য তিন আসামি ইউনিপে টু ইউ চেয়ারম্যান মো. শহীদুজ্জামান শাহীন, নির্বাহী পরিচালক মাসুদুর রহমান এবং উপদেষ্টা মনজুর এহসান চৌধুরী বিদেশে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইউনিপে টু ইউর লুকানো টাকা, বিপুল সম্পত্তি

ইউনিপে টু ইউর জালিয়াতি তদন্ত করতে গিয়ে দুদক কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে ৪৪২ কোটি ৫৭ হাজার ৫০০ টাকার খোঁজ পেয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি হিসাবে ২৬৪ কোটি, এনসিসিতে ১২০ কোটি এবং সিটি ব্যাংকে রয়েছে ৫৮ কোটি ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। যদিও দুদক বিনিয়োগকারীদের টাকা দিয়ে কেনা অনেক জমির প্লটও আবিষ্কার করেছে। তবে সেগুলোতে বিনিয়োগকারীদের নামে নথিভুক্ত করা হয়নি। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং কানাডায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ পাচারের তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৩০০ কোটি টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে।

ইউনিপে টু ইউর গ্রাহকদের টাকা দিয়ে কেনা অনেক সম্পত্তির একটি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত। ইউনিপে টু ইউ চেয়ারম্যান মো. শহীদুজ্জামান শাহীনের নামে কেনা ৩৩ দশমিক ৭৫ ডেসিমেল আয়তনের জমিটি পরে অন্য একজনের নামে করা হয়। এখন রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ইজি বিল্ডার্স সেখানে একটি আটতলা ভবন নির্মাণ করছে।

ঢাকার উত্তরায় ২৭ ডেসিমেল আয়তনের জমি প্রথমে কেনা হয়েছিল ইউনিপে টু ইউর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুনতাসির হোসেনের নামে। জমিটি এখন মুনতাসিরের এক আত্মীয় রফিকুল ইসলামের নামে নিবন্ধিত। সেখানেও একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বর্তমানে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এমডি মুনতাসিরের ঘনিষ্ঠ কুষ্টিয়ার এক রাজনৈতিক নেতার নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের জমি কেনা হয়েছে। সংস্থাটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক ‘বাংলাবাজার পত্রিকা’ কেনার জন্য এক কোটি টাকাও দিয়েছিল।

হাইকোর্টই ভরসা এখন

প্রতারিত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আদালতের রায়ের পরেও সরকার এখনও টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের আদালতের রায় অনুযায়ী কাজ করার কথা থাকলেও রায়ের পর গত ২১ মাসেও সেরকম কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এখন শেষ ভরসা হাইকোর্ট। চলতি বছরের আগস্টে হাইকোর্টে দাখিল করা রিট পিটিশন নিষ্পত্তির পর বিনিয়োগকারীরা হাইকোর্টের নির্দেশনা পেতে পারেন। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া ছয় লাখ বিনিয়োগকারীর সামনে কোনো পথও খোলা নেই।

সিপি

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!