৫ ভাইকে হাসপাতালে না নিয়ে চালককে পালানোর পরামর্শ দেন মালিক ও তার ছেলে

লাইসেন্স নেই চালকের, কাগজপত্র নেই গাড়িরও

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপের ধাক্কায় আপন পাঁচ ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ী সেই পিকআপ চালক সাহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলের ড্রাইভিং লাইসেন্সই নেই। ঘটনার দিন ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যেই গাড়িটি চলছিল ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হওয়ার পর পর গাড়ির মালিক মাহমুদুল চালক সাইফুলকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ ঘটনায় একটি সরকারি মামলা হবে, তাই তাকে এক বছর লুকিয়ে থাকতে হবে।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে পিকআপ চালক সাহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে এসব তথ্য জানান।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় এ নিয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চকরিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি সংগ্রহের পর পিকআপটি দিয়ে কক্সবাজার এবং মহেশখালীতে সরবরাহ করা হয়। তবে এই গাড়ির কোনো কাগজপত্র নেই। গত তিন বছর ধরে পিকআপটি সবজি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হলেও এর ফিটনেস ট্যাক্স এবং রুট পারমিট নেই। পিকআপের মালিক চকরিয়ার মাহমুদুল নামে এক ব্যক্তি। ২০১৬ সালে গাড়িটি তিনি কেনেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সময় কুয়াশা ছিল। গাড়িটি চলছিল ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে। কুয়াশার কারণে চালক কাউকে দেখতে পাননি। এ কারণে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের ওপর গাড়ি তুলে দেন। শেষ মুহূর্তে যদিও তিনি ব্রেক চেপেছিলেন, কিন্তু ছয় ভাইকে চাপা দেওয়ার পর ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে গিয়ে গাড়িটি ব্রেক করতে পেরেছিলেন। ঘটনার সময় ওই পিকআপে ছিলেন মালিকের ছেলে তারেক এবং মালিকের এক ভাগ্নে রবিউল।

র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে পিকআপ চালক সাইফুল জানান, দুর্ঘটনার পর তিনি গাড়ি থেকে নেমে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু মালিকের ছেলে তারেক সাইফুলকে ডেকে বলেন, এখানে না থেকে পালানো উচিত। যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের হাসপাতালে না নিয়ে তারা এরপর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

পরে একটি বাজারে এসে মালিক মাহমুদুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সাইফুল। বাজারের পাশে পিকআপটি রেখে চকরিয়ায় গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয় তাকে। মালিকের সঙ্গে সরাসরি দেখা হওয়ার পর তিনি সাইফুলকে বলেন, এ ঘটনায় একটি সরকারি মামলা হবে। এক বছর লুকিয়ে থাকতে হবে।

এরপর মালিক মাহমুদুলের পরামর্শমতো চালক সাইফুল আত্মগোপনে চলে যান। প্রথমে তিনি লামা এলাকায় একটি রাবার বাগানে কাজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে একদিন অবস্থান করলেও ঘটনাটি নিয়ে সবখানে আলোড়ন তৈরি হওয়ায় ভয় পেয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান।

দুর্ঘটনায় নিহতদের কাউকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না—এমন দাবি করে পিকআপ চালক সাইফুল জানান, দুই বছর ধরে গাড়ি চালালেও তার কোনো লাইসেন্স ছিল না। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি পিকআপটি সাত দিন ধরে চালাচ্ছিলেন। এতে তিনি দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পেতেন।

পাঁচ ভাইকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলা সেই পিকআপের মালিক চকরিয়ার মাহমুদুল এবং তার ছেলে তারেক ও ভাগ্নে রবিউল এখনও পলাতক রয়েছেন।

বাবা ডা. সুরেশ চন্দ্র শীলের মৃত্যুর পর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে ৮ ফেব্রুয়ারি পূজা দিতে চকরিয়ার ডুলাহাজারার মালুঘাট রিংভং ফকিরশাহ এলাকার মন্দিরে যাচ্ছিলেন পাঁচ ভাই ও দুই বোন। রাস্তা পার হওয়ার সময় তারা এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে একটি দ্রুতগতির পিকআপ তাদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

পিকআপের চাপায় ঘটনাস্থলেই আপন চার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও এক ভাই মারা যান। নিহতরা হলেন— অনুপম চন্দ্র শীল, নিরুপম চন্দ্র শীল, দীপক চন্দ্র শীল, চম্পক চন্দ্র শীল ও সরণ চন্দ্র শীল।

গুরুতর আহত আরেক ভাই রক্তিম সুশীল (৩২) চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। অপর এক ভাই প্লাবন সুশীল (২৫) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বোন হীরা সুশীল (২৮) চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!