৫৫ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েও বিয়ের আসরেই বরের ডিগবাজি, বাপ ঘটকসহ শ্রীঘরে

পটিয়ার কন্যা জয়া শীলের (ছদ্মনাম) সঙ্গে বোয়ালখালীর যিশু শীলের বিয়ের আসরের দিনক্ষণ ঠিক হয়। কথা পাকাপাকির সময় ৬০ হাজার টাকা ও ১ ভরি স্বর্ণ পাত্রকে দেওয়ার কথা ছিল পাত্রী পক্ষের। কথা অনুযায়ী বিয়ের আসরেই পাত্রীর পিতা পাত্রের হাতে তুলে দেন ১ ভরি স্বর্ণ। গুনেগুনে দেন নগদ ৫৫ হাজার টাকা।

আর এই টাকা ও স্বর্ণ হাতে নিয়েই বেঁকে বসে পাত্র। পাত্রের সাফ কথা, কথা অনুযায়ী দিতে হবে আরও ৫ হাজার। যৌতুকের টাকা যে বাকি হয় না!

অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বলার পরও মন গলানো গেল না যৌতুকের টাকার নেশায় বুদ হয়ে পড়া পাত্র জিকু শীলের। মাত্র ৫ হাজার টাকা বাকি রাখায় ভেঙে দেয় সে বিয়ের আসর। এ ঘটনায় মাথার উপর যেন বাজ পড়লো জয়া শীলের হতদরিদ্র পিতার।

এই সঙ্গে যৌতুকের মাত্র ৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথার ‘বরখেলাপ’ করায় বিয়ের আসর ভেঙে দেওয়ার নজির স্থাপন হল চট্টগ্রামে।

এ ঘটনায় পাত্র জিকু শীল, পাত্রের বাবা বাবুল শীল ও বিয়ের ঘটক মদন শীলকে বিয়ের আসর থেকেই বোয়ালখালী থানা পুলিশ আটক করেছে।

কনের মা জানান, সনাতন সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান বোয়ালখালী মেধাসমনি আশ্রমের ধর্মীয় রীতিতে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে। রাতে কনে পক্ষ বরযাত্রীদের গ্রহন করেন।

এরপরই যৌতুকের ৬০ হাজার টাকার মধ্যে ৫৫ হাজার টাকা বুঝে নেন বর যিশু শীল। কিন্তু ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় ধর্মীয় রীতিতে বিয়ের আসরে বসতে রাজি হননি যিশু।

শুধু তাই নয়, ওই ৫ হাজার টাকা আদায় করতে জিকু কল করে আশ্রমে নিয়ে আসেন ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র দলকে। তাদের হুমকিতে আতংকিত হয়ে পড়ে কনে পক্ষ। এরপর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না করেই জিকু ৫৫ হাজার টাকা ও ১ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালাতে চান। এ সময় আশ্রমের মহারাজ যৌতুকের বাকি ৫ হাজার টাকা নিজ উদ্যোগে দিতে সম্মতি চান পাত্র ও পাত্রের বাবার। এতেও রাজি হয়নি পাত্রপক্ষ।

পরে এ খবর জানানো হয় বোয়ালখালী থানা পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থল এসে পাত্র, পাত্রের বাবা ও ঘটককে আটক করে। এদের বাড়ি বোয়ালখালী থানার উত্তর ভূর্ষি ইউনিয়নের শীল পাড়ায়।

পাত্রীর মা আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ তাদের আটক করলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত স্বর্ণ ও যৌতুকের ৫৫ হাজার টাকা ফেরত পাননি তারা। অথচ আটকের কিচ্ছুক্ষণ আগেই তাদের হাতে যৌতুকের ৫৫ হাজার টাকা ও স্বর্ণ তুলে দেওয়া হয়। হতদরিদ্র পিতার পক্ষে বাকি মাত্র ৫ হাজার টাকা যোগাড় করা সম্ভব হয়নি বলে তার মেয়ের বিয়ের আসর ভেঙে যায়।

বোয়ালখালী থানার ওসি আব্দুল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যৌতুকের ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় বিয়ের আসর ছেড়ে পালানোর সময় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!