৫৫ বছরের বেলায়েত চবিতে পড়তে পারবেন কিনা নিজেই সন্দিহান

একবুক স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এসেছিলেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ। ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও আশা ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হতে পারবেন। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়েছেন। পরীক্ষাও দিয়েছেন ভালো। তবে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

সোমবার (২৪ আগস্ট) বিকেলের শিফটে ডি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

পরীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি জানান, পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই দিয়েছি। তবে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো কিনা সন্দেহের মধ্যে আছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম বেলায়েত শেখের। লেখাপড়া করার প্রবল মনোবল আর ইচ্ছে থাকলেও ছোট বেলা থেকে অসুস্থ বাবার সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাঁকে। কখনো দিনমজুর, কখনো হোটেল বয়, আবার কখনো গ্যারেজের টুকিটাকি কাজ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বৃদ্ধ বাবা ও অসুস্থ মায়ের সেবা করেছেন তিনি। এ জন্য লেখাপড়ার করার সুযোগ পাননি বেলায়েত শেখ। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বেলায়েত শেখের বাড়ি। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে বিয়ে করে ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে শ্রীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। একমাত্র মেয়েকে গাজীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে দেন বেলায়েত।

বেলায়েত শেখ জানান, ১৯৮৩ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সে সময় বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। পরে আর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেননি।

২০১৯ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করেন বলে জানান তিনি। এরপর ২০২১ সালে রাজধানীর রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছর তার ছেলে এসএসসি পাস করে। এসএসসিতে জিপিএ ৪.৪৩ ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৫৮ পান বলে জানান বেলায়েত। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য শ্রীপুরের মাওনার একটি কোচিং সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করছেন তিনি।

বেলায়েত বলেন, ‘২০১৭ সালে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করি। প্রথমদিকে একটু কঠিনই ছিল। কারণ সে সময় আমার কাছের মানুষজনও আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। তবে একটা সময় গিয়ে সেটা ঠিক হয়ে যায়। নিজেকে বয়স্ক ভাবি না, যুবক ভাবি। কিছু চুল পেকে গেছে। চুলে কলপ দিয়ে রাখি। কারণ কলপ দিয়ে না রাখলে এগুলোর জন্য নিজেকে বয়স্ক মনে হয়। আর তখন মনটা দুর্বল হয়ে যায়।’

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!