৫৪৪ ঘণ্টার ওভারটাইম মাত্র ৫০০ টাকা!

পূবালী ব্যাংকের কাণ্ড

ওভারটাইম বাবদ নামমাত্র পারিশ্রমিক দিয়ে ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে জোর করে ১৬ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে পূবালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। ওই প্রতিষ্ঠান আর্মড গার্ডদের ১ মাসে মোট ৫৪৪ ঘণ্টা ওভারটাইমের পারিশ্রমিক দেয় মাত্র ৫০০ টাকা। আবার ওই টাকা ভাগ করা হয় ৪-৫ জন আর্মড গার্ডের মধ্যে।

অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা কর্মীদের মৌলিক ডিউটির পর আর্মড গার্ডদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নেয় পূবালী ব্যাংক লিমিটেড সিডিএ শাখা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী ১৬ ঘণ্টা ওভারটাইম করানো হয় সম্পূর্ণ নিরস্ত্রভাবে। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অস্ত্র ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে পালন করতে হয় তাদের।

চট্টগ্রামের পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের মোট ৫৭টি শাখা রয়েছে। নগরের কোতোয়ালী মোড় সিডিএ কর্পোরেট শাখায় ১৭ জন, আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখায় ৩জন, পাহাড়তলী শাখা, আমানবাজার শাখা, পতেঙ্গা হাদিপাড়া শাখা, অক্সিজেন ও বায়েজিদ বোস্তামি ইন্ডাস্ট্রিয়াল শাখায় রয়েছে মাত্র ১ জন করে আর্মড গার্ড। বাকি ৫০টি শাখায় ২জন করে আর্মড গার্ড দায়িত্ব পালন করছেন।

গত দেড় মাসে সিডিএ কর্পোরেট শাখায় ২৪ জন আর্মড গার্ডের মধ্যে টানা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করছেন যশোর জেলার বাসিন্দা আলমগীর, খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা নুরন্নবী, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা রায়হান, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বাসিন্দা রুবেল মিয়া।

গার্ডদের একজন জানান, ‘আমরা তো মানুষ। সরকার ঘোষিত আইন অনুসারে ৮ ঘণ্টা ডিউটি পালন করার নিয়ম থাকলেও সেখানে এক প্রকার বাধ্য করে ওভারটাইম করানো হয়। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের হুমকি দেন শাখার লোকজন। সপ্তাহের ৭দিনই ডিউটি করতে হয়। আমরা পূবালী ব্যাংকের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছি।’

জানা যায়, সিডিএ কর্পোরেট শাখায় কর্মরত আর্মড গার্ডদের মূল ডিউটি হল ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করা। সেখানে প্রতিদিন ৪-৫ জন আর্মড গার্ডকে নিয়মিত ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করানো হয়। এদের মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার কিছু গার্ডকে ওভারটাইম হিসেবে ডিউটি করানো হয়। এতে মূল ডিউটি ছাড়া মাসিক মোট ওভারটাইম হয় মোট ৫৪৪ ঘণ্টা। এই ওভারটাইমের পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হয় মাত্র ৫০০ টাকা। আবার এই ৫০০ টাকার ভাগ পায় ৪-৫ জন গার্ড।

আব্দুল আলীম মির্জা নামে সিনিয়র এক আর্মড গার্ড বলেন, ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ টানা ওভারটাইমের নামে অতিরিক্ত ১৬ ঘণ্টা টানা ডিউটি প্রত্যাহার করতে পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বরাবরে একটি চিঠি দেওয়া হয়। পাশাপাশি কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শককে চিঠির মাধ্যমে অবগত করা হয়। প্রায় ২ বছর পার হলেও এখনও বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত আর্মড গার্ডদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

পূবালী ব্যাংক কমিটি সংঘের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বলেন, ‘আর্মড গার্ডদের অভিযোগ সঠিক। তাদের ওভারটাইম নিয়ে লেবার আইন না মেনে জোর করে টানা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করানো হচ্ছে। এতে সেখানে ঠিকমতো ওই ওভারটাইমের পারিশ্রমিকও দিচ্ছে না। এটা মূলত সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের কারসাজি। এ বিষয় সমাধান করতে বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানের হেড অফিস বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি। এতে কিছু অভিযোগের সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক মো. আল আমীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের আর্মড গার্ডদের কর্তব্যে পালনের বৈষম্য বিষয়ে ইতিপূর্বে কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি এখন শুনলাম মাত্র। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড সিডিএ কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনালে ম্যানেজার মোহাম্মদ মহসিন সরকার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুসারে সিডিএ শাখার আর্মড গার্ডদের ডিউটি পালনসহ তাদের ওভারটাইমের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

জোর করে ওভারটাইম ও শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে ডিউটি করানোর বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মূল ডিউটি ৮ ঘণ্টা হলেও আর্মড গার্ডকে বাড়তি ডিউটির জন্য জোর করা হয়নি। তবে তাদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ থেকে নির্ধারিত।’

মুআ/এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!