৫১ মাসের বিল উদ্ধারে জেনারেল হাসপাতালে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন!

বকেয়া বিল পরিশোধ না হওয়ায় হঠাৎ করে কর্ণফুলী গ্যাস স্টেশন থেকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় জেনারেল হাসপাতালে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন রোগী, ডাক্তার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ৫১ মাসের কর্ণফুলী গ্যাসের বিল বকেয়া। কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের দাবি বারবার তাদের জানানো হলে দায়সারাভাবে তারা বারবার এড়িয়ে যায়। জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সরকারি নিয়মনীতির কবলে পড়ে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে। এদিকে এটি মানতে নারাজ কর্ণফুলী গ্যাস স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ করতে রীতিমতো নাজেহাল হতে হচ্ছে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ করে গ্যাসলাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস স্টেশন কর্তৃপক্ষ। রোগীদের খাবার দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালে ভর্তি গর্ভবতী নীলার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কী হয়েছে। আজকের খাবার কেমন জানি কোন সমস্যা হয়েছে মনে হয়। দুপুরে বাসি খাবারগুলো আমাদের দিয়ে গেল। এ অবস্থায় এমন খাবারগুলো খাওয়া কি ঠিক হবে? তাও খেতে হচ্ছে কোন উপায় নাই।’

জানতে চাইলে ওয়ার্ড বয়রা জানায়, ‘আজকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাতে রান্না করতে পারেনি। দুপুরে খাবারগুলো সবাইকে কোনমতে দিচ্ছি। কী করব, আমাদের তো আর কোনো উপায় নাই। শীতের মধ্যে ঠান্ডার দুপুরে খাবার দিতে হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের তো সব প্রতিষ্ঠানে বকেয়া থাকে। সরকার যখন বরাদ্দ দেয় তখন আমরা ওই বকেয়া বিলগুলো পরিশোধ করি। তেমনি কর্ণফুলী গ্যাসেরও বকেয়া আছে। সেই বকেয়া বিল ওরা গত বৃহস্পতিবার বিলটা দিয়ে যায়, কিন্তু আমাদের তো শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির ভেতর আমাদের টেন্ডারের কাজ ছিল। এ জন্য কর্ণফুলী গ্যাসের বিলটা করতে পারিনি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘তাও আমরা তাদের বলেছি আমাদের বরাদ্দ আছে। এই সপ্তাহের ভিতর বিল পরিশোধ করে দেওয়া হবে। আপনারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন না। কারণ এখানে প্রায় ২০০ রোগী আছে তাদের তাদের খাওয়াদাওয়া সমস্যা দেখা দেবে। গ্যাস ছাড়া রান্নার করতে পারছি না। এখন তো সব জায়গায় গ্যাসের চুলাই ব্যবহৃত হয়। দুপুরে বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো দিয়ে কোনোমতে চললেও সবাইকে তো দিতে পারছি না। সকালে কিভাবে খাবার সরবরাহ করব সেটাই চিন্তার বিষয়।’

ডা. অসীম কুমার নাথ আরও বলেন, ‘কর্ণফুলী গ্যাসের লোকদের সাথে অনেকবার কথা বলেছি, অনুরোধ করেছি। তাও তারা মানছে না। এটা যদি আমার ঘরের লাইন হত তাহলে মানা যেতো। সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাও স্বাস্থ্য খাতে একটু সময় তো দেওয়া যায়। এক কথায় অবিবেচনামূলক কাজ করেছে তারা।’

কর্ণফুলী গ্যাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. তাজউদ্দীন ডালির সঙ্গে জেনারেল হাসপাতালে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনার কথা বললে তিনি জানান, ‘তাদের ৫১ মাসের বিল বকেয়া ছিল। বকেয়া বিলের জন্য তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা বারবারই রাজস্ব বিল পেলে পেমেন্ট করবে বলে জানায়।’

তিনি বলেন, ‘এমনকি তাদের চিঠি দেওয়া হলেও অনেকদিন পার হওয়ার পরে এসে ৭ লাখ টাকার বকেয়া বিল ৩ লাখ টাকা দিবে বলেছিল কিন্তু সেই টাকাও পরিশোধ করেনি। এজন্য আজ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। তারা বকেয়া বিল পরিশোধ করে দিলে আমরা আবার ঠিক করে দেব। আমাদের নিয়ম ২ মাসের বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। এটা তো ৫১ মাসের বকেয়া বিল!’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!