৫০ জনের সংস্পর্শে এসেছেন ফিরিঙ্গিবাজারের করোনা রোগী

৩ কর্মচারী ও ৩ ডাক্তার কোয়ারেন্টাইনে

চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে ১০ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া করোনা পজেটিভ রোগী গত কয়েকদিনে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সংখ্যা হতে পারে ধারণারও বেশি। গত ১৪ দিনে ওই ব্যক্তি কাদের সংস্পর্শে এসেছেন তা বের করতে একটা আলাদা ফাইল খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৩ কর্মচারী ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া ৩ ডাক্তারকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে ১০ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া করোনা পজেটিভ রোগীর মধ্যে একজন ফিরিঙ্গিবাজারের শিববাড়ি লেইনের বাসিন্দা। ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী। কাঠের এক্সপোর্ট- ইমপোর্ট ব্যবসায় সম্পৃক্ত এই ব্যক্তি গত মার্চে সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন ওমরা করে— এমনটাই জানা গেছে স্থানীয় সূত্রে। একই মাসে তার ছোট ভাই ফিরেছেন নিউজিল্যান্ড থেকে। তবে এই দুটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন তথ্য না থাকার কথা জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।

এসবের বাইরে চট্টগ্রামের দুটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে শেয়ারও রয়েছে তার। এর একটিতে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাও নিয়েছেন তিনি। এদিকে এর মধ্যে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে ফিরিঙ্গিবাজারের ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকের সংখ্যা ৫০-এরও বেশি। তবে সিএমপির উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদি হাসান বলেছেন, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গত ১৪ দিনে তিনি কাদের সংস্পর্শে এসেছেন তা বের করতে একটা আলাদা ফাইল খোলা হয়েছে। আরও কিছু নাম এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে। তখন এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। আর যাদের যাদের সংস্পর্শে আসার তথ্য পাওয়া যাবে সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে খোয়াজনগরে তার ৩ কর্মচারী ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া ৩ ডাক্তারকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেছে কোতোয়ালী থানা।

তবে আক্রান্ত ব্যক্তির হজ থেকে ফেরা আর তার ভাইয়ের নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি কেউই। এই বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির চার ভাই। তারা সকলেই এখানে ব্যবসা করেন। বাইরে কেউ থাকেন না। অন্যদিকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, উনার এক ভাই নিউজিল্যান্ড থাকেন। তবে তিনি দেশে এসেছেন— এমন তথ্য জানা নেই আমার। হজেও সম্ভবত যান তিনি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বী জানিয়েছেন, গত দুই মাসে বিদেশ গমনাগমন কিংবা কোন বিদেশির সংস্পর্শে আসার হিস্ট্রি নেই ফিরিঙ্গিবাজারে আক্রান্ত ব্যক্তির। তবে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা পুলিশকে অনুরোধ করবো। প্রসঙ্গত দামপাড়ায় শনাক্ত হওয়া চট্টগ্রামের প্রথম করোনা রোগীর হিস্ট্রিতেও বিদেশি কারও সংস্পর্শে আসার তথ্য ছিল না। পরে জানা গেছে তথ্য গোপন করেছিলেন তিনি।

এই বিষয়ে উপ কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের কাছে ওরকম কোন তথ্য নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।

জানা গেছে, গত ৮-১০ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন আক্রান্ত ব্যক্তি। এই সময়ে কিছুদিন পরিবারের সবার থেকে আলাদা হয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন তিনি— এমনটাই দাবি তার পরিবারের। এই সময়ের মধ্যে তিনি চট্টগ্রামের ন্যাশনাল হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

করোনা আক্রান্ত ওই কাঠ ব্যবসায়ীর তিনজন কর্মচারীর বাড়ি কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগরে। ব্যবসায়িক কাজে ওই তিন কর্মচারীর তার সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। একইভাবে তাকে চিকিৎসা দেওয়া ৩ ডাক্তারকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ফিরিঙ্গিবাজার শিববাড়ী লেইনের ১১ তলা যে ভবনে তিনি থাকেন সেই ভবনটি গত রাতেই লকডাউন করা হয়েছে। ওই ভবনে মোট ৫৭টি পরিবার বসবাস করে বলে জানিয়েছেন ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমি সকালে ওই এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটিয়েছি। লকডাউনে থাকা পরিবারগুলোর খোঁজখবর রাখছি। শিববাড়ি লেইনেও আমরা কাউকে বের না হতে অনুরোধ করছি।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!