৫০ একর বনের জমি দখল করে গড়ে উঠছে শরণঙ্করের ‘মহা আস্তানা’

সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। পেশায় তিনি ছিলেন গাড়ি চালক। কাজ করতেন গাড়ির গ্যারেজেও। এরপর বনে যান বৌদ্ধভিক্ষু। শুরু করে বনের জমি দখলের আয়োজন। বনবিভাগের ৫০ একর ভূমি দখল করে তিনি স্থাপন করেছেন বৌদ্ধবিহার। সনাতন সম্প্রদায়ের শশ্মান দখল করে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের আস্তানা। আবার ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেও সমালোচিত তিনি। পাঁয়তারা করছে আরও একশ একর সরকারী পাহাড়ি জমি দখলের।

বলছিলাম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কথিত বৌদ্ধভিক্ষু বনখেকো শরণঙ্কর থেরের গল্প। তার প্রকৃত নাম রনি বড়ুয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১০ বছর বয়সে রনি বড়ুয়ার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এ বয়সেই চট্টগ্রামের নগরীর পাঁচলাইশ থানার শুলকবহরের পাঁচকড়ি বাবুর গ্যারেজে চাকরি শুরু করেন রনি। সেখানে তিনি শিখেন গাড়ি চালানোর কাজ। এরপর রাউজান উপজেলার মুন্সিরহাটের এক ব্যক্তির গাড়ি চালানো শুরু করেন তিনি

২০০৮ সালের দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া এলাকায় জয়সেন বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তির কাছে গাড়িটি বিক্রি করে দেন মালিক। এ সময় গাড়ির নতুন চালক জসিমের সঙ্গে পরিচয় হয় রনির।

জসিম ছুটিতে গেলে বদলি চালক হিসেবে জয়সেন বড়ুয়ার গাড়ি চালাতেন রনি বড়ুয়া৷

এরপর থেকে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শ্রমণ হতে চলে যান রনি বড়ুয়া। শ্রমণের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে তিনি পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান। এরপর সিদ্ধান্ত নেন তিনি ভান্তে সাজার। গায়ে বৌদ্ধদের পবিত্র লালকাপড় জড়িয়ে আস্তানা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ফলাহারিয়া গ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। রাতারাতি রনি নাম বদলে হয়ে যান তিনি শরণঙ্কর থের।

স্থানীয়রা জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কিছুটা গহীনে প্রথমে হলুদ একটি কাপড় আর উপরে ত্রিপল দিয়ে আস্তান গড়ে তুলেন রনি। ধীরে ধীরে বেড়ার স্থাপনা গড়ে উঠে। তারপরে শুরু করেন ইটপাথরের স্থাপনা নির্মাণ। ৭-৮ বছরের ব্যবধানে বনবিভাগের একশ’ একরেরও বেশি জায়গা দখল করে নেন রনি।

এরই মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকে নিতে থাকেন বড় অংকের অনুদান। তার এসব কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন টিটু বড়ুয়া, টুনটু বড়ুয়া, বিধু বড়ুয়া নামে কিছু ব্যক্তি।

সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভূমি দখল করেই ক্ষান্ত হনন রনি বড়ুয়া। পার্শ্ববর্তী সনাতন সম্প্রদায়ের শশ্মান দখল করেন তিনি। এরপর নিজের দখল করা জায়গ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে কালিন্দিরানী সড়কে মুসলিমদের জায়গার উপর বৌদ্ধমূর্তি স্থাপন করে ওই জমিও দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন রনি।
৫০ একর বনের জমি দখল করে গড়ে উঠছে শরণঙ্করের 'মহা আস্তানা' 1
ভূমি দখলের অভিযোগে রনির বিরুদ্ধে ৮টি মামলা করে বনবিভাগ।

রনি এসব কর্মকান্ডে রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ও তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধকৃষ্টি প্রচার সংজ্ঞের সভাপতি ভদন্ত বৌদ্ধপ্রিয় মাহথেরের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। তিনি তার এ অবৈধ কার্যকলাপে কেউ সাড়া দেননি।

এই অবৈধ কাজে সমর্থন না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষোদগার শুরু করেন রনি। বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া থানায় রনি বড়ুয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে ৮টি মামলা হয়েছে। সম্প্রতি রনি বড়ুয়াকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার গ্রামে গ্রামে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনও এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রনির গ্রেফতার দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, ‘উগ্র, উচ্ছৃঙ্খল ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির মানুষ রনি। বৌদ্ধভিক্ষুরা থাকেন জগতের সকল বিলাসব্যসনের উর্ধ্বে। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সেজে শরণঙ্কর থের বিলাসী জীবনযাপন করেন। ব্যবহার করেন সিক্স প্লাসের মতো দামি মোবাইল। মিনারেল ওয়াটার শুধু খান তা নয়, ব্যবহারও করেন। বৌদ্ধবিহার এলাকায় সুরঙ্গ করে মাটির নিচে দুইতলা বাড়ি বানিয়েছেন। আধুনিক সাজসজ্জার সবকিছুই সংযোজিত বাড়িটিতেই থাকেন তিনি বিশেষ বিশেষ সময়ে। ওই ভিক্ষুর সেবাসুশ্রুষায় নিয়োজিত কয়েকজন ছাড়া আর কেউ সেই গোপন বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না।’

আদর/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!