৪ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্ত ঝরালেন প্রধান শিক্ষক, রাতে পড়ার টেবিলে না থাকাই অপরাধ

রাতে পড়ার টেবিলে না দেখায় চার এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৯ মার্চ) ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মায়ানী ইউনিয়নে। আহতরা হলো মো. আবদুল কাইয়ুম, মো. মোজাম্মেল, বিবি জুলফা ও তিশা আক্তার। তারা উপজেলার শফিউল আলম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মো. আবু সুফিয়ান।

জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রদের হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ছাত্রীরা থাকে বাড়িতে। যারা হোস্টেলে থাকে না পড়ালেখা মনিটরিং করার জন্য শিক্ষকদের একটি গ্রুপ রাতে নিয়মিত তাদের বাড়িতে যায়। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রাতে শিক্ষকদের একটি গ্রুপ মো. আবদুল কাইয়ুম, মো. মোজাম্মেল, বিবি জুলফা ও তিশা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে তাদের পড়ার টেবিলে পায়নি। পরদিন বুধবার ক্লাশ চলাকালীন সময়ে ওই শিক্ষার্থীদের বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সুফিয়ান। এতে শিক্ষার্থীদের পিঠে, হাতে ও পায়ে জখম হয়েছে। এর একপর্যায়ে শিক্ষার্থী বিবি জুলফা জ্ঞান হারালে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

আহত শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার নিয়ে যায় তার পরিবারের লোকজন।

মো. আব্দুল কাইয়ুমের মা আলেয়া বেগম বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমার ছেলে একটি মাহফিলে যায় আমার সম্মতিতে। এ সময় প্রধান শিক্ষক জানতে পারেন, কাইয়ুম পড়তে না বসে রাতে ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছে। পরেরদিন ক্লাসে গেলে মাহফিলে যাওয়ার অজুহাতে কাইয়ুমকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন প্রধান শিক্ষক। তার স্কুল ড্রেস রক্তে লাল হয়ে যায়। পরে আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাই।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শাসন করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এভাবে পেটাতে পারেন না।

শফিউল আলম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সুফিয়ান বলেন, শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগটি মিথ্যা। আমরা রাতে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শন করে মো. মোজাম্মেল, বিবি জুলফা, তিশা আক্তার ও আব্দুল কাইয়ুমকে পড়ার টেবিলে পাইনি। পরেরদিন স্কুলে আসলে তাদের প্রত্যেককে অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ১ টি করে বেত্রাঘাত করা হয়েছে। জুলফা তার বাড়িতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সারারাত জেগে ছিল। ডাক্তার জানায় সারারাত নির্ঘুম থাকায় তার গ্যাসের সমস্যা হয় এবং সে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। আমি খোঁজ নিয়েছি, তাকে বাড়িতে আনা হয়েছে এবং সে সুস্থ আছে।

তারা সবাই বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ক্লাসে উপস্থিত ছিলো বলে জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, শফিউল আলম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত প্রহারের বিষয়টি আমি শুনেছি। শিক্ষার্থীদের ভালো পড়ালেখার জন্য তদারিক করাটা ভালো। কিন্তু মারধর করার বিষয়টি ঠিক হয়নি। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!