৪ শতাধিক পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনে পৌছল ১টি জাহাজ

৪ শতাধিক পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনে পৌছল ১টি জাহাজ 1গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ : দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে সেন্টমার্টিনে যাত্রা শুরু করল পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। কারন দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের হাজার হাজার রোহিঙ্গা আগমনের ঢল ও সীমান্ত এলাকায় নদী পথে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় সঠিক সময়ে সেন্টমার্টিন যেতে পারেনি পর্যটকবাহী জাহাজ গুলো। এতে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাধারন মানুষ। এর কারন এই পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের আগমনের পদবারে মুখরিত হয়ে উঠে সাগর কন্যা দ্বীপ অপরুপ সেন্টমার্টিন। সৌন্দোর্যের লীলাভুমি এই দ্বীপটি দেখার জন্য প্রতি ববছর হাজার হাজার দেশী বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটে। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দ্বীপের সাধারন মানুষের আয়ের মাত্রা বাড়িয়ে যায়। তারা পর্যটকদের কাছে বিভিন্ন প্রকার নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র বিক্রী করে অনেক টাকার মুনাফা অর্জন করতে পারে।
অথচ রোহিঙ্গা সংকট ও নৌ-পথে বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ এতদিন নেই আর্থিক মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চালু হলো সেন্টমার্টিনদ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল।
১৩ নভেম্বর সোমবার সকাল ১০ টায় টেকনাফ দমদমিয়াস্থ কেয়ারী জেটি ঘাট প্রায় ৪ শতাধিক দেশী বিদেশী পর্যটক ও স্থানীয় লোক জন নিয়ে কেয়ারী সিন্দাবাদ নামে ১টি জাহাজ সেন্টমাটিনের উদ্যেশে রওয়ানা দেয়। গত রবিবার টেকনাফ-সেন্টমাটিন রুটে জেলা প্রশাসকের অনুমতি পায় কেয়ারী সিন্দাবাদ ও কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন। সোমবার থেকে কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজে সেন্টমাটিনে পর্যটক ও স্থানীয়দের যাতায়ত শুরু হয়। পর্যটনের ভরা মৌসুমে এই প্রথম শত শত পর্যটক সেন্টমাটিন যাতায়ত করেন। এর ফলে দ্বীপবাসীর মাঝে দেখা দেয় প্রাণচাঞ্চলতা। তবে এ জাহাজে করে সেন্টমাটিন ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহাম্মদসহ সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তারা সেন্টমাটিন দ্বীপ ভ্রমনে গেছেন যায় বলে জানা গেছে।
গত ২৫ আগষ্ট মিয়ানমারে সহিংসতাকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এ রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌ রুটে নৌযানসহ জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে। শীতের শুরুতে পর্যটন মৌসুমে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমাটিন ভ্রমনে আসে। রোহিঙ্গা সমস্যায় পড়ে জাহাজ চলাচল করতে না পেরে পর্যটন খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শুরুতে এ রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চালু হয়। তবে নাফনদীর মোহনায় নাব্যতা সংকটে মিয়ানমার সীমানা দিয়ে নৌযান চলাচল করতে হয়। এতে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়।
এদিকে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস হল পর্যটকের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ায় প্রশাসন জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়। সোমবার থেকে চালু হওয়ার খবরে সকাল থেকে পর্যটক আসতে শুরু করে। এ মৌসুমে সেন্টমাটিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদ ও কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন চলাচলে অনুমতি দেওয়া হয়। তবে অন্যান্য জাহাজ সমূহ কয়েকদিনের মধ্যে অনুমতি নিয়ে চালু হবে বলে জানা গেছে।
পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে সেন্টমার্টিন দ্বীপে শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রেস্তোরা সমূহ নানা রুপে সাজানো হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে জাহাজ যেতে না পেরে হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রেস্তোরার ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে। তাছাড়া জাহাজ কর্তৃপক্ষের মাঝেও নেমে আসে দূভোর্গ। তাদের ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের দূর্বীসহ জীবন কাটাতে হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যায় পর্যটন শিল্প ব্যবসায়ীদের যেমন ক্ষতির সম্মূখিন হতে হয়, তেমনি সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সেন্টমাটিন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দু রব জানান, পর্যটন মৌসুমে রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ দ্বীপের হোটেল, কটেজ ও রেস্তোরাসহ সবকিছু বেহাল অবস্থা বিরাজ করছিল। এমনকি পর্যটক পূজি করে শতাধিক ভ্যান চালক জীবিকা নির্বাহ করত। এ মৌসুমে এতদিন জাহাজ বন্ধ থাকায় নানা সমস্যা পৌহাতে হয়েছে। তবে মৌসুমের দেড় মাস পার হলেও পর্যটকবাহী জাহাজ চালু হওয়ায় তাদের মাঝে কিছুতা প্রাণচাঞ্চলতা ফিরেছে।
কেয়ারী সিন্দাবাদের টেকনাফ ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম জানান, রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে পর্যটন মৌসুমে দেড় মাস পর জাহাজ চালাচলের অনুমতি দেয় প্রশাসন। ফলে সোমবার প্রায় ৪ শতাধিক যাত্রী নিয়ে কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজ সেন্টমাটিন রওয়ানা করে। আজ থেকে প্রতিদিন সেন্টমাটিন জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে। আগের মত পর্যটকদের আগমন বাড়লে অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হবে বলে আশা করছেন তিনি। সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহাম্মদ জানান, দ্বীপের মানুষ সব সময় পর্যটক বান্ধব। তবে জাহাজ চালুর ফলে দ্বীপের লোকজনের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। পর্যটন মৌসুমে যাতে দেশী বিদেশী পর্যটক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদে দ্বীপে ভ্রমণ করার সু ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় বলে জানায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!